কিআনন্দের সুরে মাতবে কিশোরেরা

ভোরবেলায় স্বাস্থ্যসচেতন অনেকেই হাঁটতে বেরোন চন্দ্রিমা উদ্যান কিংবা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের আশপাশে। তাঁরা বড়। আজ ভোরে অনেকেরই হয়তো চোখে পড়েছে, দল বেঁধে কিশোর-কিশোরীরা ছুটছে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে। তাদের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস। কারণ, আজ কিআনন্দ। তাদের সবচেয়ে বড় উত্সব, সবচেয়ে বড় মিলনমেলা।

কিশোর আলোর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে প্রতিবছরই আয়োজন হয় কিআনন্দ উত্সবের। কিশোর-কিশোরীরা থাকে অপেক্ষায়। গতবার কিআনন্দের আগের রাত থেকেই ছিল টানা বৃষ্টি। সকাল সাতটায় রেসিডেনসিয়ালের মাঠে গিয়ে দেখি, বৃষ্টির মধ্যেই বাচ্চারা সুশৃঙ্খলভাবে একজন একজন করে ভেতরে ঢুকছে। আটটায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা। বৃষ্টির বাধা তুচ্ছ করে এক ঘণ্টা আগেই হাজির তারা। তাদের আটকে রাখা যায়নি।

আমাদের নতুন প্রজন্ম অপ্রতিরোধ্য, আটকে রাখা যায় না। আমাদের ছোট্ট মেয়েরা একের পর এক ট্রফি জিতে চলেছে ফুটবলে। গণিতে সোনা জিতছে। কারণ, তাদের স্বপ্ন আছে, তারা জানতে চায়, কিছু করে দেখাতে চায়। উত্সাহে, প্রাণশক্তিতে তারা ভরপুর। তারা জানে তাদের পৃথিবীটা অনেক বড়। প্রয়োজন শুধু তাদের সঠিক পথটা চেনানো। কিশোর আলো পাঁচ বছর ধরে সেই কাজটাই করে আসছে। কিআনন্দের উদ্দেশ্যও তা-ই।

কিআনন্দে কিশোর-কিশোরীরা হইচই আর খেলাধুলা করবে। আবার আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের কথাও শুনবে। অনুপ্রেরণা নেবে সাকিব আল হাসান, তিশার কাছ থেকে। যারা মোবাইল ফোনে ছোট ছোট চলচ্চিত্র বানাতে চায়, তাদের চলচ্চিত্র বিষয়ে খুঁটিনাটি বলবেন অমিতাভ রেজা। জয়া আহসান আর চঞ্চল চৌধুরী শোনাবেন অভিনয় নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা। লেখক হতে চায় যারা, তাদের সামনে হাজির হবেন জনপ্রিয় লেখক আহসান হাবীব। ফটোগ্রাফি নিয়ে কথা বলবেন বিখ্যাত আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন। সারা দিনের ছোটাছুটির পর কিশোর-কিশোরীদের মন ভরাবে মিনার আর অর্ণবের গান। প্রিয় শিল্পীর সঙ্গে যখন গলা মেলাবে মাঠভর্তি খুদে কণ্ঠ, সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য!

কিআনন্দে আসার জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে রেজিস্ট্রেশন করেছে ছেলেমেয়েরা। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কিআনন্দে প্রবেশ করা যাবে না। বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্যই এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। তবে যারা আগে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেনি, তাদেরও উপায় আছে। কিআনন্দের ভেন্যুতে কিশোর আলোর গ্রাহক হওয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তিন মাসের গ্রাহক হলে কিআনন্দে প্রবেশ করা যাবে সহজেই। ঢুকতে হবে কলেজের পেছনের গেট দিয়ে।

কিশোর-কিশোরীদের জন্য এটি বছরের সেরা আয়োজন। কিআনন্দে সবার নিমন্ত্রণ। অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল আটটায়। শেষ করব ঠিক বিকেল চারটায়, যেন বাচ্চারা সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে যেতে পারে। বাবা-মায়ের হাত ধরে বাচ্চারা একটা দিন আনন্দে কাটাবে, এটাই আমাদের চাওয়া।

এই লেখা যখন লিখছিলাম, তখনো ঢাকার রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের মাঠে চলছিল কিআনন্দের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বিশাল মঞ্চটা প্রস্তুত। বর্ণিল সাজে সেজে উঠেছে বিভিন্ন স্টল। সাউন্ডের লোকজন দেখছিলেন সব ঠিক আছে কি না। সব কাজেই বিশেষ যত্ন। এটা যে ছোটদের অনুষ্ঠান।

দেশের সেরা তারকারা তো থাকবেনই, কিন্তু এ অনুষ্ঠানের সবচেয়ে বড় তারকা আমাদের কিশোর-কিশোরীরা। তারাই কিশোর আলো। কিআনন্দ তাদেরই অনুষ্ঠান।