হয়ে গেল জমজমাট রোবট অলিম্পিয়াড

দেশের প্রথম রোবট অলিম্পিয়াড। এতে শতাধিক খুদে রোবটপ্রেমী অংশ নেয়। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৪১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। ঢাকা, ২৬ অক্টোবর। ছবি: প্রথম আলো
দেশের প্রথম রোবট অলিম্পিয়াড। এতে শতাধিক খুদে রোবটপ্রেমী অংশ নেয়। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৪১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। ঢাকা, ২৬ অক্টোবর। ছবি: প্রথম আলো

সানবীম স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজিতা জায়না শ্রেয়সী ও স্যার জন উইলসন স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ওয়ামিয়া নায়ারের মাথায় হাত। কারণ বাসা থেকে বানিয়ে আনা মুভির সেটের পুরোটাই ভেঙে পড়েছে কাজ শুরু করার আগে। তবে সেটা সামান্য সময়ের জন্য। কারণ তারপরই তারা নেমে পড়েছে নতুন সেট বানানোর কাজে। বড় কার্ড বোর্ডের বাক্স কেটে সমুদ্র ও সমুদ্রতটের আবহ তৈরি, কাগজ আর সোলা রং করে পানির ব্যবস্থা করা এবং ছোট পুতুল দিয়ে বিপন্ন মানুষের অবয়ব। সব তৈরি শেষে শুরু হয় আইপ্যাড দিয়ে তাদের এক মিনিটের সিনেমা বানানোর কাজ। কাজ শেষে ভাইয়ের ল্যাপটপে বসে সেটি সম্পাদনা করেছে ওয়ামিয়া। দিন শেষে ওই মুভি তাদের এনে দিয়েছে ‘রোবট ইন মুভি’ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠত্ব।

অন্যদিকে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থী রাফিয়াদ সালেহ চৌধুরীর বাবা তার জন্য একটি ড্রোন এনেছিল সিঙ্গাপুর থেকে। কিন্তু এয়ারপোর্টে সেটি জব্দ করা হয়। ড্রোন চালানোর স্বপ্নভঙ্গের পর সালেহ শপথ করে সে নিজেই ড্রোন তৈরি করবে। খোঁজখবর নিয়ে সে হাজির হয় শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগে। জানতে পারে আরডুইনো, রাসবেরি পাইয়ের কথা। তারপর সে শুরু করে তাঁর স্বপ্নযাত্রা। আর যাত্রাপথে আজ প্রথম বাংলাদেশ রোবট অলিম্পিয়াডে সে জয় করে নিয়েছে স্বর্ণপদক। তার বানানো রোবটটি ঠিকঠাকমতো নির্দিষ্ট গতিপথেই কেবল যায়নি, যাত্রাপথের বাধাও অপসারণ করেছে।

নাজিতা, ওয়ামিয়া আর সালেহর মতো শতাধিক খুদে রোবটপ্রেমী তাদের রোবট, ক্যামেরা ইত্যাদি নিয়ে হাজির হয়েছিল আজ শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে। সেখানে বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবটিক্স ও মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের প্রথম রোবট অলিম্পিয়াড।

আগামী ডিসেম্বর মাসের ১৫-১৯ তারিখে ফিলিপাইনে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের জন্য দল নির্বাচনের লক্ষ্য নিয়ে এই আয়োজন।

সকালে বেলুন উড়িয়ে আয়োজনের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডেটা সফটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব জামান। দিনভর ৭ থেকে ১২ এবং ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী রোবটপ্রেমীরা দুটি ক্যাটাগরিতে মিশন চ্যালেঞ্জ, ক্রিয়েটিভ ক্যাটাগরি, রোবট ইন মুভি ও রোবটিক বুদ্ধি প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

২০তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডের সঙ্গে মিল রেখে প্রতিযোগিতার থিম ছিল সমুদ্র বাঁচাও। মিশন চ্যালেঞ্জে প্রতিযোগীরা রোবট তৈরি করে, যা সমুদ্রের ময়লা–আবর্জনা দ্রুত রক্ষা করতে পারবে। রোবট ইন মুভিতে প্রতিযোগীরা কার্জন হলের বারান্দায় বসে সেট তৈরি করে এবং রোবট বা রোবটের ডামি দিয়ে শুটিং করে। তারপর এক মিনিটের মুভি জমা দেয়। মিশন চ্যালেঞ্জে ছিল নির্দিষ্ট যাত্রাপথে যাওয়া ও পথের বাধা অপসারণ। আর রোবটিক বুদ্ধি মূলত একটি কুইজ প্রতিযোগিতা।

নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল থেকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে এসেছে ১১ জন শিক্ষার্থী। প্রতিযোগিতা নিয়ে কথা হয় তাদের সঙ্গে। স্কুলটির দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ইরফান নেওয়াজ বলে, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমরাও চলতে চাই। এ জন্য প্রযুক্তির এমন প্রতিযোগিতা বেশি বেশি আয়োজন করার আহ্বান জানায় সে।’

বিকেলে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৪১ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এদের মধ্য থেকে ক্যাম্পের মাধ্যমে ফিলিপাইনের জন্য বাংলাদেশ দল গঠন করা হবে বলে জানা গেছে।

এ আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে গিগাটেক লিমিটেড ও জনতা ব্যাংক লিমিটেড। সহযোগী ছিল এম্বার আইটি, ঢাকা এফএম, ইএমকে মেকার ল্যাব, নাগরিক টিভি ও বিজ্ঞানচিন্তা। এ ছাড়া নিনো রোবটসহ কারিগরি সহায়তা দিয়েছে সেরেনা টেকনোলজিস।