শীতে রাজধানীতে গ্যাস-সংকট তীব্র হওয়ার আশঙ্কা

জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু তা থেকে তিতাস গ্যাস সিস্টেমে কোনো গ্যাস আসছে না। ফলে রাজধানীতে গ্যাসের চাহিদা বাড়লেও সংকট কাটছে না। সাধারণত শীতে গ্যাসের সংকট বাড়ে। এবার শীত আসার আগেই অনেক এলাকায় গ্যাস–সংকট দেখা দিয়েছে। আসন্ন শীতে সংকট আরও তীব্র হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

গ্যাস–সংকট নিয়ে নগরীর উত্তর ও দক্ষিণ অংশের অভিযোগ কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিনই অভিযোগ আসছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রাহকদের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তাঁদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।  

তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের দায়িত্বশীল সূত্র এবং বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ অবস্থার কথা জানা যায়। সূত্রমতে, গত জুন মাসে জাতীয় গ্রিডে ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যোগ হয়। পর্যায়ক্রমে যোগ হয় আরও ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু তিতাসে নতুন গ্যাস যোগ হওয়া দূরে থাক, বরং তিতাসে আগের বরাদ্দ গ্যাস থেকেই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং সার কারখানাগুলোকে গ্যাস বরাদ্দ দিতে হচ্ছে। পেট্রোবাংলা থেকে তিতাস পায় প্রতিদিন ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এখান থেকে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দিতে হচ্ছে পিডিবিকে। সেই গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে ঘোড়াশাল, সিদ্ধিরগঞ্জসহ বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এ ছাড়া সার কারখানার জন্য তিতাস থেকে নেওয়া হচ্ছে প্রায় আরও ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস।

দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে বর্তমানে প্রতিদিন মোট উৎপাদিত হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। তিতাসেই এখন গ্যাসের চাহিদা প্রতিদিন ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের ওপরে। আবাসিক এবং শিল্প খাতে প্রচুর চাহিদাপত্র জমা রয়েছে। তাদের গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না।

জাতীয় গ্রিডে যোগ হওয়া ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস সিস্টেমে। এ ছাড়া যাচ্ছে বাখরাবাদ ও জালালাবাদ গ্যাস সিস্টেমে। কিন্তু তিতাস গ্যাস সিস্টেমে নতুন করে কিছুই যোগ হয়নি। এ বছর ডিসেম্বর নাগাদ প্রতিদিন আরও ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি যোগ হবে। তখনো তিতাসকে বাড়তি গ্যাস দেওয়া হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

>এ বছর আর তিতাসে এলএনজি যুক্ত হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত। আর কোনো উৎস থেকেও গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

যোগাযোগ করা হলে তিতাস গ্যাস কোম্পানির পরিচালক (অপারেশন) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, চাহিদা বাড়ার কারণে গ্যাস–সংকটও বেড়েছে। আগামী শীত মৌসুমে রাজধানীর গ্যাস–সংকট মেটাতে হলে এলএনজির ওপর নির্ভর করা ছাড়া কোনো উপায় নেই।

পেট্রোবাংলার এলএনজি শেলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসের দিকে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির কথা রয়েছে। এরপর আরও এক হাজার মিলিয়ন এলএনজি আমদানির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এই এলএনজি এলে তা তিতাসে যুক্ত হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

 এলাকায় এলাকায় গ্যাস–সংকট

পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের গোয়ালনগরের বাসিন্দা তরুণ ঘোষের বাসায় শেষ রাতে রান্না হয়। কারণ, সকাল থেকে চুলায় গ্যাস থাকে না।

গোয়ালনগরের মতো পুরান ঢাকার রাধিকামোহন বসাক লেন, রাজার দেউড়ি, পানিটোলা, এস কে দাস রোড, গেন্ডারিয়া, বাগিচাসহ আশপাশের অনেক এলাকায় গ্যাস–সংকট রয়েছে। গ্যাস সমস্যা চলছে মোহাম্মদপুরের আদাবর, শেখেরটেক, জাকির হোসেন রোড এলাকায়।