বিআরটিসিই এখন ভরসা!

পরিবহন ধর্মঘটের কারণে রাজধানীর অন্য এলাকার মতো ফার্মগেট এলাকাও গণপরিবহনশূন্য। বিভিন্ন এলাকায় যেতে মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে কিছুক্ষণ পরপর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাস কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে। রাস্তায় এখন কেবল বিআরটিসির বাসই মানুষের ভরসা।

সকাল সাড়ে ১০টায় ফার্মগেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন গাড়িচালক মো. ফিরোজ মিয়া। গত শনিবার তিনি ঢাকায় মণিপুরিপাড়ায় আত্মীয়ের বাসায় এসেছেন। গতকাল রোববার থেকে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট শুরু হওয়ায় তিনি গাজীপুরে যেতে পারেননি। তাই আজ গাজীপুর যাওয়ার জন্য বের হয়েছেন। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি গাজীপুর গন্তব্যের একটি বিআরটিসি বাসের দেখা পেলেন। বাসে উঠতে উঠতে তিনি বলছিলেন, ‘রাস্তায় অন্য কোনো বাস নেই। বিআরটিসি বাস না থাকলে যেতে পারতাম না।’

ফিরোজ মিয়ার মতো আরও অনেকের ভরসা এখন বিআরটিসি বাস। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যেতে মানুষ এখন এই বাসই বেছে নিচ্ছেন। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে অন্য পরিবহনের বাস বন্ধ রয়েছে।

৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটে রাজধানীর রাস্তায় মানুষের শেষ ভরসা এখন বিআরটিসি বাস। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটে রাজধানীর রাস্তায় মানুষের শেষ ভরসা এখন বিআরটিসি বাস। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

মতিঝিল থেকে ফার্মগেটে মিরপুর গন্তব্যের একটি বাস এসে থামার সঙ্গে সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা অনেকেই সেই বাসে গিয়ে উঠছেন। বাস কম থাকায় বিআরটিসির একেকটি বাস এসে তুলনামূলক বেশি সময় নিয়ে স্টপেজে দাঁড়াচ্ছিল। এ সময় কথা হয় কাজীপাড়ার বাসিন্দা আকতার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম। কোনো বাস তো নেই, সিএনজি (সিএনজিচালিত অটোরিকশা) চাইছে ৫০০ টাকা। এত টাকা ভাড়া দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাই অপেক্ষা করছিলাম আর কিছু পাওয়া যায় কি না। এ সময় বিআরটিসি বাস এসেছে দেখে সেখানেই উঠলাম। এই বাস না থাকলে আজকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো।’

বেলা ১১টার দিকে বাংলামোটর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, অনেক মানুষ বাসের জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। কিছুক্ষণ পরপর বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার বিআরটিসির দ্বিতল বাস আসছে। মিরপুর থেকে বাংলামোটরে বিআরটিসি বাসে করে এসেছেন আবদুল মান্নান নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘এই ধর্মঘটের সময় বিআরটিসি বাস খুব ভালো সেবা দিচ্ছে। পরিবহনশ্রমিকেরা আমাদের যেভাবে জিম্মি করে রেখেছেন, তাতে বিআরটিসির মতো সরকারি বাস সেবা থাকলে তাঁদের এই দৌরাত্ম্য দেখতে হতো না। আমরা চাই, এমন সরকারি বাস সেবা আরও বাড়ুক।’

অন্য পরিবহন বন্ধ থাকলেও রাজধানীর মানুষের পরিবহনের চাহিদা মেটাচ্ছে বিআরটিসি বাস।  ছবি: মোছাব্বের হোসেন
অন্য পরিবহন বন্ধ থাকলেও রাজধানীর মানুষের পরিবহনের চাহিদা মেটাচ্ছে বিআরটিসি বাস। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

বিআরটিসি সূত্র জানায়, বিআরটিসি বাস সচল রাখার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশনা আছে। এ জন্য রাজধানীতে চলে—এমন সব বাস রাস্তায় নেমেছে। ধর্মঘটের সময়ে এসব বাস যাতে সচল থাকে, সে জন্য বিআরটিসি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিসির উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) মো. আলমাছ আলী বলেন, ‘এখন রাজধানীর বিভিন্ন গন্তব্যে ৫১১টি বাস চলছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো বিআরটিসি বাস রাস্তায় চালু রেখেছি। এ সেবা নির্বিঘ্ন রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই সচেষ্ট আছে।’