সুলতানা কামাল ও মিজানুর রহমান যা বললেন

সুলতানা কামাল ও মিজানুর রহমান
সুলতানা কামাল ও মিজানুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল রোববার এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার ও সংগঠন, মানবাধিকারকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করে আসছিলেন। আজ নিবন্ধন বাতিলের পর প্রথম আলোর কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল এবং মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান।

সুলতানা কামাল
সরকার আদালতের আদেশ নির্বাহ করেছে, সে জন্য ধন্যবাদ জানাই

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল আমাদের জন্য সুখবর। জামায়াত ধর্মের এমন ব্যবহার করেছে, যা মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, মানুষের সম–অধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় হয়। এর প্রতি আমাদের সমর্থন কখনো থাকতে পারে না। এর চেয়ে আরও বড় বিষয় হলো, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এহেন অপরাধ নেই, যা জামায়াত করেনি। এই সংগঠনটি হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজের মতো জঘন্য কাজ করেছে। আর এসব করার পর দলটি বহালতবিয়তে বাংলাদেশে রাজনীতি করেছে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে। একাত্তরের ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর যে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, এটির মূল নকশাকার জামায়াত। ইতিহাসের এই বর্বর হত্যাকাণ্ডের দায় তাদের। বাংলাদেশে বিএনপির হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছে জামায়াত। রাজনীতিতে এসে এরা আমাদের শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটিয়েছে। স্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ সামাজিক নানা খাতে এরা প্রভাব বিস্তার করেছে। আমাদের তরুণদের একটি অংশকে বিভ্রান্ত করেছে। এর ভয়ানক কুফল এখন আমরা ভোগ করছি। জামায়াতের ছড়ানো বিষের ছোবল আমাদের আরও ভোগ করতে হবে। সাম্প্রদায়িক এবং জঙ্গিগোষ্ঠীর বিস্তারে এই দলটির ভূমিকা আছে। আজ আমি জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্তের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ দিতে চাই। তারা আদালতের আদেশ যে নির্বাহ করেছে, সে জন্য ধন্যবাদ জানাই।

মিজানুর রহমান
সতর্ক থাকতে হবে, ওরা যেন অন্য দলে ভিড়তে না পারে

জামায়াতে ইসলামী নামের সংগঠনটি ইতিমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। আমরা এই সংগঠনটির ভয়াবহ এবং নারকীয় কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতাম। কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ আদালত এবং মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আমাদের কাছে আরও সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে এই মানবতাবিরোধী সংগঠনটির প্রকৃত চেহারা। দেশের মুক্তি সংগ্রামের সেই সময়ে নরহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজের মতো জঘন্য কাজ করলেও এই সংগঠনটি আজ পর্যন্ত তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি। এতে তাদের ধৃষ্টতা প্রকাশ পায়। এ দেশে বহু আগেই জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেওয়া উচিত ছিল। বাংলাদেশের জন্মে বিরোধিতা করা সংগঠন এ দেশে রাজনীতি করতে পেরেছে, এটা একটা অভাবনীয় ঘটনা। এত দিন এ সংগঠনটি কীভাবে কাজ করল, সেই প্রশ্নই থেকে যায়। তবে শেষ পর্যন্ত এত দিন পর এই সংগঠনটি নিষিদ্ধ হলো, এটা খুশির খবর। এখানে কিন্তু সতর্ক থাকার বিষয় আছে। এই সতর্কতা দেশের অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য। কারণ, এখন এই বর্বর সংগঠনটির নেতারা অন্য দলে ভেড়ার চেষ্টা করবে। অন্য দলে ঢুকে তারা যেন তৎপরতা না চালাতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আজ বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে এই প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, যেন এই অপরাধী সংগঠনটির নেতাদের তারা নিজেদের দলে না প্রবেশ করতে দেয়। কোনো দল যদি এই কাজ করে, তবে জাতির কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর পবিত্র দায়িত্ব দেশ মাতৃকার বিরোধিতাকারীদের প্রশ্রয় না দেওয়া।