আবার আসিব ফিরে এই সংসদে: প্রধানমন্ত্রী

দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেন। ফোকাস বাংলা
দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দেন। ফোকাস বাংলা

দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখা এবং বড় প্রকল্পগুলোর কাজ শেষ করতে টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সুযোগ চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও নৌকায় ভোট দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

দশম জাতীয় সংসদের শেষ অধিবেশনের শেষ কার্যদিবসে গতকাল সোমবার সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আহ্বান জানান। ভাষণের শেষ দিকে কবি জীবনানন্দ দাশের ‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতার প্রথম লাইন ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিড়িটির তীরে—এই বাংলায়’ আবৃত্তি করে শোনান তিনি। এরপরই কবিতার লাইনটির সঙ্গে মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবার আসিব ফিরে এই সংসদে।’

কোনো অঘটন বা যুদ্ধবিগ্রহ না হলে এটাই চলতি সংসদের শেষ অধিবেশন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসীকে অনুরোধ করব আপনারা আমাদের ভোট দেন। আবার সেবা করার সুযোগ দেন। ইনশা আল্লাহ বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অদম্য গতিতে এগিয়ে যাবে।’

দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘ছাড়পত্র’ কবিতার কয়েকটি চরণ আবৃত্তি করে শোনান সংসদে। তিনি আবৃত্তি করে বলেন, ‘চলে যাব–তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল/ এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’

নিশ্চয় মানুষ আবার নৌকায় ভোট দেবে এই আশাবাদের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো শেষ করতে আরও কিছু সময় প্রয়োজন। সেটা দিতে পারে দেশের জনগণ। আবার যদি ভোট দিয়ে সুযোগ দেয়, ২০২১ সালে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ।

দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। এরপর থেকে ২৩ অধিবেশনে কার্যদিবস ছিল ৪১০টি। এই সময়ে আইন পাস হয়েছে ১৯৩টি। অবশ্য ২৩ অধিবেশন গতকাল শেষ হলেও সংসদের মেয়াদ থাকবে আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। নির্বাচনকালীন তিন মাসের মধ্যে অধিবেশন ডাকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতির আদেশ পাঠের মধ্য দিয়ে সংসদের ২৩তম অধিবেশনের সমাপ্তি টানেন।

গতকাল সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এখন আর কারও কাছে ভিক্ষা করে বাজেট করতে হচ্ছে না। পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এটা ধরে রাখতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের ধারাবাহিকতা। মানুষ আবার ভোট দিলে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত করবেন। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেওয়ার পর অনেকে কটূক্তি করেছিল, ব্যঙ্গ করেছিল। কিন্তু আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনাও তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জীবনে কোনো চাওয়া–পাওয়া নেই তাঁর। যতক্ষণ দেহে প্রাণ থাকবে, ততক্ষণ মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন। যতক্ষণ আছেন, দিয়ে যাবেন।

দশম সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকার প্রশংসা করে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, এই সংসদে অশালীন বাক্য কাউকে শুনতে হয়নি। সংসদ নিয়ে মানুষের মাঝে যে বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছিল, দশম সংসদ তা দূর করেছে। সংসদ যে মানুষের জন্য কাজ করে, তা নিশ্চিত করেছে। গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে যে মানুষের উন্নয়ন হয়, তা প্রমাণিত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর আগে সমাপনী বক্তব্য দেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। নবম সংসদের সঙ্গে দশম সংসদের তুলনা টেনে রওশন বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রহমতে সংসদের পবিত্রতা রক্ষা করতে পেরেছি বলে আমার মনে হয়। এটাই সবচেয়ে বড় কথা।’

দশম সংসদকে ঐতিহাসিক উল্লেখ করে রওশন বলেন, জনগণ ও কিছু মানুষ এই সংসদ নিয়ে অনেক কথা বলেন। কিন্তু এ কথাগুলো যাঁরা বলেন, তাঁরা কখনো খতিয়ে দেখেননি যে সংসদ কার্যকর কি না। দশম সংসদে জনগণের সমস্যা নিয়ে যত আলোচনা হয়েছে, এর আগে কোনো সংসদে তা হয়নি। একাদশ সংসদ নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এমন আশা প্রকাশ করে রওশন বলেন, নির্বাচন কমিশনকে যেন স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। ঐক্যফ্রন্ট আলোচনার জন্য চিঠি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চেয়েছেন। এতে রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে। কিন্তু সংবিধানের মধ্য থেকেই সব সিদ্ধান্ত হতে হবে।

জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপির সঙ্গে নতুন ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। নির্বাচন বানচালের বীজ ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার মধ্যে লুকিয়ে আছে। এর আড়ালে আছে খালেদা জিয়াসহ দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করা, অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করা, অস্বাভাবিক সরকার করা। এ পরিস্থিতিতে সংবিধান সমুন্নত রাখতে হবে। একচুল ছাড় না দিয়ে শক্ত হাতে তাদের দমন করা এবং যথাসময়ে নির্বাচন করা।

সংসদের সমাপনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী প্রমুখ।