চার দিন পর গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গেল পুলিশ

সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নারী কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন।  ছবি: প্রথম আলো
সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নারী কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। ছবি: প্রথম আলো
>
  • গত শুক্রবার পিএইচএ ভবনে হামলা-ভাঙচুর
  • গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র আশুলিয়া থানায় তিনটি অভিযোগ দিয়েছে
  • আহত একজন ছাত্র আরেকটি অভিযোগ দিয়েছিলেন
  • মঙ্গলবার ভাঙচুর–হামলার তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ
  • আওয়ামী লীগ নেতার দেয়াল নির্মাণ বন্ধ

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ ভবনে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের চার দিন পর গতকাল মঙ্গলবার ঘটনাস্থলে গেছে পুলিশ। এ সময় তারা ভাঙচুর ও হামলার তথ্য সংগ্রহ করে। তারা ঘটনার বিষয়ে উপস্থিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথাও বলেছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির দখলে থাকা জায়গার ওপর আওয়ামী লীগ নেতার দেয়াল নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।

এ দিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নারী কর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে গতকাল প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন।

গত শুক্রবার সকালে শতাধিক দুর্বৃত্ত রড, লাঠি, চাপাতি নিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পিএইচএ ভবনে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় তারা ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করে। তারা গণবিশ্ববিদ্যালয় ও গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেলের ছাত্রীদের অকথ্য গালিগালাজ করে এবং হোস্টেল থেকে তাঁদের বের করে দেয়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অভিযোগ, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ‘কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেডের’ চেয়ারম্যান কাজী মহিবুর রবের নির্দেশে দুর্বৃত্তরা এ হামলা চালায়। এ ঘটনায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র আশুলিয়া থানায় তিনটি অভিযোগ দিয়েছে। ওই ঘটনায় আহত গণবিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র আরেকটি অভিযোগ দিয়েছিলেন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শেখ মো. আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেল চারটার দিকে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অভিযান) মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে চারজনের একটি দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে। ছাত্রী হোস্টেলেও তাঁরা যান। তবে পুলিশের সঙ্গে কোনো ছাত্রীর কথা হয়নি।

আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাবেদ মাসুদ বলেন, কেউ যেন বিশৃঙ্খলা করতে না পারে, সে জন্য সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে। আর জমিজমা নিয়ে কারও কোনো বিরোধ থাকলে আদালতে যেতে বলা হয়েছে। হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

দেয়াল নির্মাণকাজ বন্ধ
পিএইচএ ভবনে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের আগের দিন ২৫ অক্টোবর বিকেল থেকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দখলে থাকা ১৬ শতাংশ জমি নিজেদের দাবি করে দেয়াল নির্মাণ শুরু করেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. নাছির উদ্দিন। প্রায় একই সময়ে এর পাশের জায়গায় দেয়াল নির্মাণ শুরু করেন আমিনুল ইসলাম। সেখান থেকে কিছু দূরে আরেকটি জায়গায় দেয়াল নির্মাণ শুরু করেন মোহাম্মদ আলী নামের এক ব্যক্তি। এসব জায়গা গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দখলে ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মো. নাছির উদ্দিনের নির্মাণশ্রমিকেরা পাঁচ দিন ধরে পুরোদমে দেয়ালের নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। গতকাল সকালে আশুলিয়া থানার পুলিশ এসে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়।

নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে নাছির উদ্দিন বলেন, ‘পুলিশ বন্ধ রাখতে বলল। কী আর করব।’

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে দেয়াল নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানান আশুলিয়া থানার ওসি রিজাউল হক।

জমি দাবিকারীদের সংবাদ সম্মেলন
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের দখলে থাকা বিভিন্ন স্থানের জায়গা নিজেদের দাবি করে গতকাল রাতে আশুলিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে চারটি পক্ষ। এর মধ্যে কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেডের প্রতিনিধিও ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা দাবি করেন, ডা. জাফরুল্লাহ তাঁদের কেনা জায়গা দখল করে আছেন।

এই চারটি পক্ষই ১৫ থেকে ২৪ অক্টোবর আশুলিয়া থানায় ডা. জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা করেছিল।

হাত ভাঙেনি লিমনের
গত শুক্রবার পিএইচএ ভবনে হামলার সময় বাধা দিতে গিয়ে দুর্বৃত্তদের মারধরের শিকার হন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র লিমন হোসেন। তিনি গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার তারেক হাসানের অধীনে চিকিৎসাধীন। গতকাল তারেক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, হামলায় লিমন শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পেয়েছেন। এর মধ্যে ডান হাতের কনুইয়ের আঘাত ছিল সবচেয়ে বেশি। তবে হাতের হাড় ভাঙেনি, চিড়ও ধরেনি। এই আঘাতকে ‘সফট টিস্যু ইনজুরি’ বলে।

ঝালকাঠির রাজাপুর ইউনিয়নের সাতুরিয়া গ্রামের লিমন হোসেন ২০১১ সালে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে র্যাবের গুলিতে পা হারান। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে র‍্যাব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২০১৩ সালে তাঁকে দুটি মামলা থেকেই অব্যাহতি দেওয়া হয়। পরে তিনি গণবিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।