জাপাকে ছাড় দেবে না আ.লীগ

আমির হোসেন, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মজিদ ও সেলিমা আহমাদ
আমির হোসেন, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মজিদ ও সেলিমা আহমাদ

১৯৭৩ সালের পর কুমিল্লা-২ আসনে জয়হীন আওয়ামী লীগ। ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে জয়ের সুযোগ এলেও জোটের কারণে আসনটি ছেড়ে দিতে হয় জাতীয় পার্টিকে (জাপা)। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় সরব রয়েছেন চারজন। দলে কোন্দল থাকলেও এবার সবাই চান দলীয় প্রার্থী। জাপাকে ছাড় দিতে চায় না স্থানীয় আওয়ামী লীগ।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে এখানে জয়ী হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার। গত বছরের ২৩ অক্টোবর তিনি মারা যান। ফলে এই আসনে প্রার্থী নিয়ে এখনো নিশ্চিত নয় বিএনপি। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের প্রচারণা ও গণসংযোগও নেই।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে মহাজোটের হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী বর্তমান সাংসদ আমির হোসেন জাপার একমাত্র প্রার্থী।

আওয়ামী লীগে চারজন
২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পান হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিক্ষাবিদ আবদুল মজিদ। তবে জাপার সঙ্গে জোট করায় আসনটি ছেড়ে দিতে হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছিলেন ৭৬ হাজার ৬৬৬ ভোট; যা এই আসনে নৌকার সর্বোচ্চ ভোট। এবারও আবদুল মজিদ শক্তিশালী মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে মনে করছেন তাঁর সমর্থকেরা।
আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সেলিমা আহমাদ, উত্তর জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার হোসেন ও তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকারও মাঠে রয়েছেন।
এলাকায় শিক্ষাবিস্তারে অবদান রাখা আবদুলমজিদ নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সমর্থন নিয়ে দলে মজিদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিমা আহমাদ। তাঁদের দুজনের বাড়িই হোমনায়। হোমনায় আওয়ামী লীগে দৃশ্যমান কোন্দল নেই। তবে তিতাসে বিভক্তি চরমে। উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকার একদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগ আরেক দিকে। রয়েছে ছোট ছোট উপদল। যে কারণে তিতাসে খুনোখুনি হয়েছে।
তিতাস আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহসীন ভূঁইয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এবার আর কাউকে এই আসন দেবে না। দলের প্রার্থী চাই। মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও এমনটা চান।’
পারভেজ হোসেন সরকার বলেন, ‘দলের কাছে মনোনয়ন চাইব। কোন্দল নিরসনের জন্য আমি তো পদ-পদবি ছেড়ে শওকত-মহসীন ভাইদের নেতৃত্ব মেনে নিয়েছি।’
আবদুল মজিদ বলেন, ‘হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগকে প্রায় দুই যুগ ধরে ঢেলে সাজিয়েছি। এক দশক ধরে তিতাসেও দলীয় কার্যক্রম চলছে। দল মনোনয়ন দিলে এবার নিশ্চিত জয় হবে।’
সেলিমা আহমাদ বলেন, ‘হোমনা ও তিতাসের মানুষ অবহেলিত। এলাকার উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের সাংসদ দরকার। দলের নেতা-কর্মীরা আমার পক্ষে কাজ করছেন।’

বিএনপির প্রার্থী ঠিক হয়নি
এম কে আনোয়ারের মৃত্যুর পর এই আসনে এখন পর্যন্ত বিএনপির কোনো প্রার্থী নেই। তিতাসের নেতা-কর্মীরা চান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই আসনে প্রার্থী হোন। হোমনা বিএনপির নেতা-কর্মীরা চান এম কে আনোয়ারের বড় ছেলে মাহমুদ আনোয়ার প্রার্থী হোন। বর্তমানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আছেন।
দলের নেতা-কর্মীরা মনে করেন, হোমনা ও তিতাসে বিএনপি ২৭ বছর ধরেই সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। দুই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও বিএনপির। যে কেউ প্রার্থী হলেই ধানের শীষ ভালো করবে।
জানতে চাইলে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি চাই দুটি আসনে নির্বাচন করতে। দল যদি মনে করে তাহলে দুটি আসনে (কুমিল্লা-১ ও ২) নির্বাচন করতে প্রস্তুত আছি। এটা আমার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। দল তো বড় ব্যাপার।’ মাহমুদ আনোয়ারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে থাকে আমেরিকায়। এলাকায় নেই। নির্বাচন করার ইচ্ছা থাকলে তো জানতাম।’
হোমনা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান মোল্লা বলেন, দলের প্রার্থী এখনো ঠিক হয়নি। মাহমুদ আনোয়ার নির্বাচন না করলে তিনিই মনোনয়ন চাইবেন। খন্দকার মোশাররফ নির্বাচন করলে আলাদা ব্যাপার।
কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী বলেন, এই আসনে কাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেটা সবাই মিলে বসে ঠিক করা হবে। কেন্দ্রীয় নেতারাই এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবেন।

জাপায় একক প্রার্থী
হোমনা জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মঞ্জুর ইসলাম বলেন, বর্তমান সাংসদ আমির হোসেনই দলের প্রার্থী।
আমির হোসেন বলেন, তিতাস আওয়ামী লীগে বিভক্তি আছে। মারামারি, হানাহানি ও খুনোখুনি তারাই করছে। জাতীয় পার্টি এতে নেই। মহাজোট হলে জাপা এই আসন পাবেই। জোট না হলে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবেন।

কুমিল্লা–২
মোট ভোটার: ২ লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৫ 
২০০৮ সালের নির্বাচন
বিজয়ী প্রার্থী: এম কে আনোয়ার (বিএনপি)
প্রাপ্ত ভোট: ৯৪ হাজার ১০৫ 
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী: আবদুল মজিদ (আ.লীগ) 
প্রাপ্ত ভোট: ৭৬ হাজার ৬৬৬