সবুজে বিনোদনে বদলে যাবে বনানী পার্ক

বনানী পার্কের প্রস্তাবিত নকশা।  ছবি: সংগৃহীত
বনানী পার্কের প্রস্তাবিত নকশা। ছবি: সংগৃহীত

প্রবেশপথ পেরিয়ে ঢুকলে আর দশটা মাঠের মতোই খোলা জায়গা। এক কোনায় টিনের পুরোনো ঘর। মাঠে খেলাধুলা করে শিশু-কিশোররা। বনানী পার্কের বহু বছরের এই চিত্রের আমূল পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। সেখানে বসতে যাচ্ছে শিশুদের বিনোদনের বিভিন্ন উপকরণ, ওয়াকওয়ে, সাইকেল লেন। থাকবে নারীদের জন্য বিশেষ বসার স্থান, গণশৌচাগার।

বনানী ১৮ নম্বর সড়কের অবস্থিত বনানী ক্লাব নামে অধিক পরিচিত পার্কটির আমূল পরিবর্তনের এই উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, পার্কটির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হবে, এটা দুর্যোগ পরিস্থিতিতে নগরবাসীর জন্য আশ্রয়স্থল হবে।

রাজধানীবাসীর শরীরচর্চা, বিনোদন এবং শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে ২২টি পার্ক ও ৮টি খেলার মাঠ সংস্কার করছে ডিএনসিসির পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ। বনানী পার্কের সংস্কারও ওই উদ্যোগের অংশ। সংস্কারের পর এর নাম হবে বনানী উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন পার্ক। ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলেন, জায়গাটি হবে খোলামেলা, সবুজ আর ছায়াঘেরা। এখানে খেলবে শিশুরা, নারীরা হাঁটবে, গল্প করবে।

সম্প্রতি সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পার্কটি বাইরে থেকে টিন দিয়ে ঘেরা। ভেতরে চলছে কর্মযজ্ঞ। ইট, বালু, সিমেন্ট আর মাটির স্তূপ মাঠের ভেতরে। বেশ কয়েকটি গাছ ইতিমধ্যে কাটা হয়ে গেছে। পুরো মাঠই নতুন করে তৈরি হচ্ছে। পার্কের বাইরে একটি সাইনবোর্ডে এই কাজের কার্যকাল দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত।

বনানী সোসাইটির সভাপতি শওকত আলী ভূঁইয়া বলেন, বনানী মাঠটি একসময় ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টের (ডিআইটি) মালিকানায় ছিল। এরপর সিটি করপোরেশনের মালিকানায় যায়। সম্প্রতি সোসাইটিকে সঙ্গে নিয়ে ডিএনসিসি বনানীর মাঠ ও পার্ক উন্নয়নের কাজ করছে। এ কাজ শেষ হলে এলাকাবাসীর জন্য বেশ সুবিধা হবে।

বনানী পার্কের নকশার কাজ করেছে ভিত্তি স্থপতিবৃন্দ লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠানের স্থপতি ইকবাল হাবীব জানান, ঢাকার ২২টি পার্ক নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। এসব পার্কে যাতে সব বয়স, শ্রেণির মানুষের যাতায়াত সুগম হয় এবং বিনোদনের ব্যবস্থা থাকে, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পার্কগুলো জনগণের সম্পত্তি, তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার চিন্তা থেকেই নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে। এলাকার সব মানুষ এই পার্ককে নিজের পার্ক বলে মনে করবে। নারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে এসব পার্কে আসবে, বেড়াবে। শিশুরা খেলতে পারবে, সাইকেল চালাতে পারবে। পার্কগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়েও চিন্তা করা হয়েছে।

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, এলাকাবাসী নিজেরা অংশ নিয়ে পার্কের অভ্যন্তরে কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার তা নিয়ে মত দিয়েছেন, নিজেরা অংশ নিয়েছেন। পার্কের নকশা করার সময় তাঁদের মত ও পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এসব পার্কে বড় কোনো স্থাপনা তৈরি করা হবে না।

ডিএনসিসির পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তারিক বিন ইউসুফ প্রথম আলোকে বলেন, বনানীর ১৮ নম্বর পার্ক ও মাঠটি খোলা জায়গা হিসেবে দুর্যোগের সময় ব্যবহার করা হবে। সে সময় কতজন মানুষ এখানে আশ্রয় নিতে পারবে, তা নিয়ে এখনো কাজ চলছে। বনানী মাঠের আয়তন ১ দশমিক ২১ একর। এই পার্কটি সংস্কার ও উন্নয়নে ডিএনসিসির ৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে।

স্থপতিরা বলেন, পার্কে সবার প্রবেশগম্যতা নিশ্চিত করতে যেখানে কেবল পার্ক আছে, সেখানে খেলার মাঠও রাখা হবে। আবার যেখানে মাঠ আছে সেখানে পার্কের সুবিধা থাকবে। ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের সুবিধা থাকবে। এসব পার্ক ও মাঠকে কোনো গোষ্ঠী বা ক্লাব মালিকানায় নিতে পারবে না।