শালিকের পায়ে প্রথম রিং

এই বামুনি কাঠশালিকটির পায়ে রিং পরিয়েছেন ব্রিটিশ পাখি বিশেষজ্ঞ ম্যাট প্রায়ার। গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।  ছবি: বার্ডস ক্লাবের সৌজন্যে
এই বামুনি কাঠশালিকটির পায়ে রিং পরিয়েছেন ব্রিটিশ পাখি বিশেষজ্ঞ ম্যাট প্রায়ার। গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছবি: বার্ডস ক্লাবের সৌজন্যে
>

*রিং পরানো পাখির অস্তিত্ব সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম
*পাখি ধরে পায়ে রিং পরিয়ে আবার অবমুক্ত করা হয়
*বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাব ২০১০ সাল থেকে রিং ক্যাম্প করছে
*ফলে বাংলাদেশে বেশ কটি নতুন পাখির অস্তিত্ব জানা গেছে

বামুনি কাঠশালিকের পায়ে বাংলাদেশে গতকাল বুধবার প্রথম রিং পরানো হয়েছে। সম্ভবত প্রথমবারের মতো এই পাখির পায়ে রিং পরানো হলো। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ব্রিটিশ পাখি বিশেষজ্ঞ ম্যাট প্রায়ার এই রিং পরান। ম্যাট পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে প্রায় এক লাখ পাখির পায়ে রিং পরিয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে খ্যাত।

বহু বছর ধরে রিং পরানো পাখির অস্তিত্ব সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাব ২০১০ সাল থেকে রিং ক্যাম্পের আয়োজন করে আসছে। এর ফলে বাংলাদেশে বেশ কটি নতুন পাখির অস্তিত্ব জানা গেছে। নানা অঞ্চলের পরিবেশ নিয়ে জানা গেছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। জাল পেতে যত্নসহকারে পাখি ধরে পায়ে রিং পরিয়ে আবার অবমুক্ত করা হয়। এ থেকে প্রাপ্ত তথ্য পাখি সংরক্ষণে ভূমিকা রাখে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পাখি বিশেষজ্ঞ মনিরুল হক খান গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, পাখির জীবনপ্রণালি ও গতিবিধি জানার জন্য রিং পরানো উত্তম পদ্ধতি। তবে এ কাজ হতে হবে খুবই অভিজ্ঞ হাতে।

চার দিন ধরে পাখি বিশেষজ্ঞদের একটি দল রাজশাহীতে কাজ করছে। ম্যাট প্রায়ার ছাড়াও এই দলে রয়েছেন ব্রিটিশ পাখিবিজ্ঞানী স্যাম বেইলি, বাংলাদেশ বার্ডস ক্লাবের সহসভাপতি তারেক অণু ও বন বিভাগের কর্মকর্তা জোহরা মিলা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা রাজশাহীর চর মাঝারদিয়াড় এলাকায় তিন দিনে প্রায় ৪০০ পাখির পায়ে রিং পরিয়েছেন। গতকাল সারা দিন তাঁরা প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক সালেহ্ রেজার তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কাজ করেন।

বামুনি কাঠশালিকের ইংরেজি নাম ব্রাহ্মিণী স্টার্লিং। লম্বায় ২১ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে। দেহ বাদামি। মাথা ও ঘাড় কালো। ঘাড়ের পেছনে ঝুলে থাকা লম্বা কালো ঝুঁটি। গাল, গলা, বুক ও পেট বাদামি। ধূসর ডানা ও লেজের প্রান্ত কালো। চোখ হলদে। চোখের পেছন ও চঞ্চুর গোড়ার চামড়া নীল। পা লেবু-হলুদ।

বিশেষজ্ঞ দলের এক সদস্য জানান, এই শালিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে খুব কম দেখা যায়। গতকাল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা চারটি বামুনি কাঠশালিকের পায়ে রিং পরিয়েছেন। সম্ভবত এই প্রথম কোনো বামুনি কাঠশালিকের পায়ে রিং পরানো হলো। এ ছাড়া তাঁরা মেঘ হও মাছরাঙার পায়ে রিং পরিয়েছেন।

ব্রিটিশ পাখি বিশেষজ্ঞ ম্যাট প্রায়ার গত বছর রাজশাহীর চরে সাইক্সের রাতচরা নামের একটি নতুন পাখি আবিষ্কার করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাজশাহীর চর এলাকায় নানা জাতের পাখি পাওয়া যায়। রিং পরানোর সময় তাঁরা ডিম দেওয়ার উপযোগী লাল মামুনিয়া পেয়েছেন। অথচ এদের আবাসস্থল নষ্ট করা হচ্ছে। চরের ঘাস কেটে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। চাষের জন্য ট্রাক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে। পাখিদের জন্য এই জায়গাগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি।