খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে: রিজভী

রুহুল কবির রিজভী। প্রথম আলো ফাইল ছবি
রুহুল কবির রিজভী। প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এ অভিযোগ করেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়নি, কেবল পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, সেই মুহূর্তে তাঁকে কারাগারে প্রেরণ করার উদ্যোগ শুধু মনুষ্যত্বহীন কাজই নয়, এটি সরকারের ভয়ংকর চক্রান্ত। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও তাঁর জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য সৈয়দ আতিকুল হকের অধীনে তিনি চিকিৎসাধীন। চিকিৎসক খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেননি এবং মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান চিকিৎসক জলিলুর রহমান বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। এ অবস্থায় সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিতে বাধ্য করতে চাপ সৃষ্টি করছে।

বিএনপির মুখপাত্র রিজভী বলেন, চিকিৎসা না দিয়ে কারাগারে প্রেরণ খালেদা জিয়ার জীবনকে বিপন্ন করার অথবা শারীরিকভাবে চিরতরে পঙ্গু করার চক্রান্ত। খালেদা জিয়া সুস্থ হোন, এটি ‘বিদ্বেষপ্রবণ’ সরকার কখনো চায় না। তিনি অভিযোগ করেন, খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে লাগামছাড়া ক্রোধে এই ‘অবৈধ’ শাসকগোষ্ঠী এখন তাঁর জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এটি শেখ হাসিনার ‘হিংস্র’ আচরণেরই চরম বহিঃপ্রকাশ।

রিজভী বলেন, অহংকার, উন্মত্ততা, হিংসা ও দখলকৃত ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নির্লজ্জ লড়াই চালাতেই বিচারবুদ্ধি হারিয়ে সরকার খালেদা জিয়ার জীবনকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারের সৌজন্যবোধ ও হিতাহিত জ্ঞান লোপ পেয়েছে বলেই দেশের বিপুল জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার ওপর চালানো হচ্ছে অমানবিক নিপীড়ন। সরকারের পাতানো পথে বিরোধী দলকে নির্বাচন করতে বাধ্য করানোর জন্যই সরকার খালেদা জিয়াকে নিয়ে নিষ্ঠুর প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠেছে। তাঁর চিকিৎসা পাওয়ার অধিকারকেও কেড়ে নিয়েছে। চিকিৎসা শেষ না করেই হাসপাতাল থেকে কারাগারে প্রেরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।

খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার আহ্বান জানিয়ে রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিএসএমএমইউতে ভর্তি রাখতে হবে, না হলে জনগণ আর বসে থাকবে না, খালেদা জিয়াকে বিপর্যস্ত করার যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে এবার মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে হলেও প্রতিরোধ করবে।

নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে রিজভী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে সংলাপের সময় কথা দিয়েছিলেন, নতুন মামলা দেওয়া হবে না, গ্রেপ্তার করা হবে না এবং প্রকৃত রাজবন্দীদের মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসেে কোনো বিশ্বাস মেলেনি। গতকাল সংলাপে প্রধানমন্ত্রী ঐক্যফ্রন্টের বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আমিও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, সমাবেশকে কেন্দ্র করে তিন দিন ধরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের চিরুনি অভিযান চালিয়ে ছেঁকে ধরা হয়েছে, তার জন্য। জেলা-মহানগরের সভাপতি থেকে শুরু করে সাবেক সাংসদ, কেউই সরকারের গ্রেপ্তার অভিযান থেকে রেহাই পাননি। এমনকি সমাবেশে আসা ও যাওয়ার পথে হাজারের অধিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

রিজভী অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তার করার পর প্রথমে টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে—এই কথা বলে দর–কষাকষি করা হয়েছে। অনেক নেতা-কর্মীর কাছ থেকে টাকা নিয়েও ছাড়া হয়নি। এমনকি ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের বড় বড় গ্রুপ করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তল্লাশি ও পুলিশি হানাতে হাজার হাজার নেতা-কর্মী ঘরবাড়ি ও এলাকাছাড়া হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

বিএনপির এ নেতা প্রশ্ন করেন, সংলাপ কি তাহলে চূড়ান্ত আক্রমণের পূর্বে কিছুটা সময়ক্ষেপণ? তা না হলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার না করার অঙ্গীকার করার পরও এত তাণ্ডব, এত পাইকারি গ্রেপ্তার, সরকার কি তাহলে প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করেছে? প্রধানমন্ত্রী অতীতের মতো বলেন একটা, কিন্তু কাজ করেন অন্যটা।