রিট নিষ্পত্তি, চাইলে নতুন আবেদন নিয়ে আসতে পারেন

খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া

বিশেষায়িত হাসপাতালে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। এ কথা জানিয়ে হাইকোর্ট বলেছেন, নিষ্পত্তি হওয়া বিষয় নতুন করে উন্মুক্ত করার অবকাশ নেই। যদি মনে করেন, আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালন হয়নি, তাহলে আদালত অবমাননার আবেদন দাখিলের সুযোগ আছে। যদি মনে করেন নতুন কোনো কার্যকারণ তৈরি হয়েছে, তাহলে নতুন করে আবেদন নিয়ে আসতে পারেন।

আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে আগে করা ওই রিটের ধারাবাহিকতায় আর একটি আবেদন দায়েরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের অনুমতি চাওয়ার প্রেক্ষাপটে আদালত এসব কথা বলেন।

বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশনা চেয়ে খালেদা জিয়ার করা রিটটি গত ৪ অক্টোবর নিষ্পত্তি করে কিছু নির্দেশনা, পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দেন হাইকোর্টের একই দ্বৈত বেঞ্চ। আদালত খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নতুন করে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করতে ও অবিলম্বে তাঁকে বিএসএমএমইউতে ভর্তি ও চিকিৎসাসেবা শুরুর নির্দেশ দেন। এক মাস বিএসএমএমইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়ার পর আজ খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

আজ বিকেলে খালেদা জিয়ার বিষয়টি আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী কায়সার কামাল। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।

আইনজীবী কায়সার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসাসেবা শেষ না করে বিএনপির চেয়ারপারসনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে—এ বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করে হলফনামা করে আবেদন দায়েরের জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। আগে করা রিট আবেদনটি নিষ্পত্তি হয়ে গেছে জানিয়ে আদালত বলেছেন চাইলে নতুন করে আবেদন করতে পারেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিচারিক আদালত গত ৮ ফেব্রুয়ারি রায় দেন। রায়ের দিন থেকে খালেদা জিয়া নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। হাইকোর্টের আদেশের পর চিকিৎসার জন্য ৬ অক্টোবর তাঁকে বিএসএমএমইউতে নেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি ওখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

সমিতির সংবাদ সম্মেলন
খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে পুরোনো কারাগারে স্থানান্তর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে দুপুরে সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘সকালে খবর পেলাম, আধা ঘণ্টার নোটিশে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এটি খুবই দুঃখজনক। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল আদালতের নির্দেশে। আদালতকে অন্তত জানানো উচিত ছিল, যে যেহেতু আপনি (আদালত) নির্দেশ দিয়েছেন, এই নির্দেশে পাঠিয়েছি, কিন্তু তিনি এখন সুস্থ, আমরা তাঁকে (খালেদা জিয়াকে) এখন জেলখানায় নিয়ে যেতে চাই। সে রকম কোনো নোটিশও দেওয়া হয়নি। এটি দুঃখজনক। আদালতে গিয়ে বুঝতে পারলাম, এ রকম কোনো নোটিশ আদালতের কাছে আসেনি। আমরা মনে করি, এটা বিচার বিভাগের ওপর অবজ্ঞা করা হয়েছে।’

আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানও। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে আবার অনুরোধ করব, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য আবার তাঁকে হাসপাতালে প্রেরন করুন। খালেদা জিয়া সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে চিকিৎসার মধ্যে রাখুন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁর চিকিৎসায় গঠিত বোর্ডের সব সদস্য সই করে না বলবেন তিনি (খালেদা জিয়া) সুস্থ হয়েছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা মনে করব যে তিনি (খালেদা জিয়া) সুস্থ হন নাই।’

সমিতির সম্পাদক আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সমিতির সহসভাপতি গোলাম মোস্তাফা, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আখতার, সহসম্পাদক কাজী মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীনসহ কার্যনির্বাহী কমিটির কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।