হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখা হয় অপুকে

কেরানীগঞ্জের অপু বর্মণ (২৫) আত্মহত্যা করেননি। তাঁকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করার পর ঘরের খুঁটির সঙ্গে গামছা দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছিল অজ্ঞাত খুনিরা। মৃত্যুর নয় মাস পর অপুর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

অপুর ভাই বিশ্বজিৎ বর্মণ কেরানীগঞ্জ থানায় ৩ নভেম্বর হত্যা মামলা করলে পুলিশ সন্দেহভাজন দুই খুনিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন, অপুর স্ত্রী তৃষ্ণা বর্মণের ভগ্নিপতি রণজিৎ হাওলাদার ও শ্যালক শৈশব বর্মণ। তাঁরা দুজনই এখন কারাগারে। এ ছাড়া পলাতক অপুর স্ত্রী তৃষ্ণা বর্মণ ও শ্বশুর নিরঞ্জন বর্মণ।

মামলার কাগজপত্র বলছে, গত ৪ মার্চ কেরানীগঞ্জের ব্রাহ্মণকিত্তা গ্রামের বাসায় অপুকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে ভাই বিশ্বজিৎ তাঁকে পুরান ঢাকার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

শ্বাসরোধে অপুর মৃত্যু
কয়েক বছর আগে অপু ভালোবাসে প্রতিবেশী তৃষ্ণা বর্মণকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর নিজের বাসায় না থেকে তিনি শ্বশুরবাড়িতে সংসার শুরু করেন। অর্পণ বর্মণ নামের ছয় বছর বয়সী একটি ছেলেও আছে অপু-তৃষ্ণার।

বিশ্বজিৎ বর্মণ প্রথম আলোকে বলেন, বিয়ের আগে অপু কেরানীগঞ্জের একটি দোকানে চাকরি করতেন। তাঁদের সংসার ভালোই চলছিল। চাকরিটা চলে যাওয়ার পর অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন অপু। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝগড়াঝাঁটি হতো। এ নিয়ে মৃত্যুর আগের দিন রাতে অপুকে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন বেধড়ক পিটিয়ে জখম করে। এ জন্য সেদিন রাতে অপু তাঁদের বাসায় চলে আসেন।

মামলায় বলা হয়েছে, সেদিন (৪ মার্চ) বেলা সোয়া একটার দিকে অপু ছেলে অর্পণকে স্কুল থেকে আনার জন্য বাসা থেকে বের হন। এরপর ৩০ মিনিট পর বাসায় খেতে এসে বিশ্বজিৎ অপুকে ডাকতে থাকেন। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বিশ্বজিৎ অপুর কক্ষের দরজায় ধাক্কা দেন। এ সময় তিনি ঘরের খুঁটিতে অপুকে গামছা দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে অপুকে নামান। অপুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক চিকিৎসক ফাইকা রহমান অপুর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলেছেন, অপুকে গলা টিপে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে।

মামলার বাদী বিশ্বজিৎ প্রথম আলোকে বলেন, ঘরের দরজা চাপানো ছিল। অপুকে হত্যা করার পর গামছা দিয়ে লাশ ঝুলিয়ে দিয়ে খুনিরা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে, অপু আত্মহত্যা করেছেন।

সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অপুর বাম চোখে কালো দাগ ছিল। গলার বাম পাশে তিনটি, ডান পাশে একটি আঁচড়ের দাগ। কপালের বাম পাশেও ছিল আঁচড়ের দাগ।

অপুর মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল সে ব্যাপারে তদন্ত কর্মকর্তা কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ আলা উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ময়নাতদন্ত করে ফরেনসিক চিকিৎসক বলে দিয়েছেন, অপুকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করা হয়েছে। দুজনকে তিনি গ্রেপ্তার করেছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

আলা উদ্দিন বলেন, অপু ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন; সেই ঘরের দরজা যে সেদিন ভেতর থেকে বন্ধ ছিল না তা তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। এখন ঘরে সেদিন কে বা কারা ঢুকে অপুকে হত্যা করেছে, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

অপুর ভাই বিশ্বজিৎ বলছেন, যে বা যারা তাঁর ভাইকে হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি। অপুর ছেলে অর্পণ তাঁর নানিদের কাছে আছে। পুলিশ জানিয়েছে, অপুর শ্বশুর নিরঞ্জন আর স্ত্রী তৃষ্ণা পলাতক আছেন।