রাজধানীতে হিজড়াদের সেলফি ও মেহেদি উৎসব

উৎসবে এসে সেলফিতে মেতেছেন হিজড়ারা। ঢাকা, ১১ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
উৎসবে এসে সেলফিতে মেতেছেন হিজড়ারা। ঢাকা, ১১ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

রাস্তাঘাটে বা বাসে হিজড়াদের দেখলে সবাই ভয়ে থাকেন। যাঁরা নতুন সন্তানের বাবা-মা হয়েছেন তাঁদের আতঙ্ক সব চেয়ে বেশি। তবে আজ রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার গেটের চিত্রটা ছিল বেশ ব্যতিক্রম। পথচারীরা হিজড়াদের সঙ্গে সেলফি তুলছেন। যে নারী হাসপাতালে এসেছিলেন আত্মীয়কে দেখতে তিনিও হাতের তালুতে মেহেদি দেওয়ার জন্য বসে গেলেন এক হিজড়ার সামনে।

২০১৩ সালের ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে 'তৃতীয় লিঙ্গ' হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৪ সালে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এই জনগোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের দিনটিকেই কিছুটা ব্যতিক্রমভাবে উদ্‌যাপন করেছে গবেষণা ও সমাজসেবামূলক সংগঠন ‘রি-থিংক’।

জনগণের মন থেকে হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা দূর করতে রাজধানীর ছয়টি স্থানে হিজড়াদের নিয়ে ‘খোলা হাওয়া’ নামে মেহেদি ও সেলফি উৎসবের আয়োজন করেছে সংগঠনটি। হাতে মেহেদি দেওয়া শেষে একজন বললেন, ‘এর আগে কখনোই হিজড়াদের এত কাছে আসার সুযোগ বা সাহস হয়নি। কাছে আসার পর মনে হলো- এই হিজড়ারাও সাধারণ মানুষের মতোই মানুষ।’

রি-থিংক-এর প্রতিষ্ঠাতা লুলু আল মারজান বলেন, ২০১৬ সাল থেকে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে তাঁদের সংগঠনটি। এ পর্যন্ত প্রায় ৬৯ জন হিজড়াকে বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। গান শেখানোসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে হিজড়াদের। যে হিজড়ারা এখন পর্যন্ত তেমনভাবে কোনো কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব হয়নি, মেহেদি ও সেলফি উৎসবে সেসব হিজড়াদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যাতে তাঁরা জনগণের কাছাকাছি আসতে পারেন। উৎসবে ৫০ জনের বেশি হিজড়ারা অংশ নেন।

শুধু পথচারী নন, হিজড়ারা একজন অন্য জনের হাতে মেহেদি লাগিয়ে দেন, নিজেরা মিলে সেলফি তোলেন। পরে যে যাঁর পথে চলে যান। বাবলি নামের এক হিজড়া বললেন,‘মেহেদি দিয়া, সেলফি তুইল্যা আমরা ক্ষণিকের জন্য মজা পাইতাছি। কিন্তু আমগোর জীবনডাতে খালি কষ্ট আর কষ্ট।’

এক নারীর হাতে মেহেদি রাঙিয়ে দিচ্ছেন এক হিজড়া। ঢাকা, ১১ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
এক নারীর হাতে মেহেদি রাঙিয়ে দিচ্ছেন এক হিজড়া। ঢাকা, ১১ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীর দয়াগঞ্জের গুরুমা রাশিদা বলেন, তাঁর পাসপোর্ট আছে। ভোটার তালিকায় নাম আছে। সব জায়গায় তিনি আব্দুর রশীদ নামেই পরিচিত। তবে যে হিজড়ারা বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন, তাঁদের কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস। তাঁরা রাস্তায় ভিক্ষা করতে চান না। সমাজে অন্য মানুষের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চান।

বেসরকারি হিসবে দেশে হিজড়াদের সংখ্যা এক লাখ হলেও সরকারি হিসেবে তা ১২ থেকে ১৩ হাজার। হিজড়ারা জানালেন, সরকারিভাবে তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি মিললেও হিজড়া পরিচয়ে ভোট দেওয়া বা পাসপোর্ট করার অধিকার পাননি। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রম নীতিমালা- ২০১৩ প্রণীত হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়নে ভাতাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কার্যক্রম চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।