ভোটে যাচ্ছে বাম জোটও

‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে’ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে বাম গণতান্ত্রিক জোটও। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও দু-একদিনের মধ্যে তা আসতে পারে বলে জোট সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

জোট সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কিংবা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গেই যাবে না তারা। আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে অংশ নেবে তারা। তবে ‘প্রহসনের’ নির্বাচন হলে সেখান থেকে ফিরে আসার জন্য ব্যবস্থা তারা রাখবে। জোটগত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিলেও তাদের প্রত্যাহারপত্র জোটের কাছে রাখা হতে পারে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচন নিয়ে জোটের অবস্থান নিয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত শিগগিরই জানানো হবে।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের সঙ্গে জোটের যে সংলাপ হয়েছে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসগুলোও এখন পুরণ হয়নি। মানুষকে আশ্বস্ত করার মতো রাজনৈতিক পদক্ষেপও দেখা যায়নি। তাই নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তাঁদের মধ্যে সংশয় রয়ে গেছে।
জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, সদিচ্ছা প্রমাণ করার জন্য হয়রানি, মামলা, গ্রেপ্তার দ্রুত বন্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি দলের বেপরোয়া আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ৪৮ ঘন্টার মধ্যেও নির্বাচন কমিশনের কার্যকর পদক্ষেপ আমরা দেখিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের তফসিল নতুন করে নির্ধারন করা এ মুহূর্তে জরুরি। তবে বাম জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক মনে করেন, এ বিষয়ে আলোচনারই কিছু নেই। ইতিমধ্যেই প্রায় সব দলই নির্বাচনের তফসিল পেছানোর কথা বলেছে। সেই দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে নির্বাচন দুই তিন সপ্তাহ পিছিয়ে দিলে নির্বাচন কমিশনেরও সদিচ্ছা প্রমাণ হবে। তিন মনে করেন, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কোনো দক্ষতা বা নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে পারেনি।

নির্বাচনের অংশ নেওয়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না এলেও বাম জোট এ বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে রেখেছে। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ভোটে যেতে চাই। আবার প্রহসনের কোনো নির্বাচনের সঙ্গী হতে চাই না। প্রহসনের কিছু করার চেষ্টা করলে জোটগতভাবেই সিদ্ধান্ত হবে।

বাম জোটের নির্বাচনী প্রস্তুতি
দেশের ২৪টি বাম রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে আছে ১০ টি। এই দলগুলো হলো—বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ (ইনু), জাসদ (বাদল), ন্যাপ (মোজাফফর), গণতন্ত্রী পার্টি, গণআজাদী লীগ, বাসদ (রশীদ খান), কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও সাম্যবাদী দল। আর ২০ দলীয় জোটে রয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল। এই দলগুলো জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। 

বাম গণতান্ত্রিক জোট আত্মপ্রকাশ করে এ বছরের ১৮ জুলাই। এ জোটের দলগুলো হলো সিপিবি, খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলন ও বাসদ (মার্কসবাদী)।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলছেন, অপরাজনীতির বাইরে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি জোরদার করার উদ্দেশ্যে বাম দলগুলোর এই জোট। বাম জোট নিজস্ব বক্তব্য নিয়েই মাঠে আছে। তাই অন্য কোনো দল বা জোটের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
জোটের সমন্বয়ক সাইফুল হক জানালেন, জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি আছে। তাঁদের লক্ষ্য সর্বোচ্চ সংখ্যক আসনে জোটগতভাবে প্রার্থী দেওয়া।

জোটের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন আগে জোটের পক্ষ থেকে একটি সাব কমিটি গঠন করে দেওয়া আছে। তারা ইতিমধ্যেই অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন। এই জোটের আটটি দলের মধ্যে সিপিবি, বাসদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির নিবন্ধন আছে। নির্বাচনে এই তিন দলের প্রার্থীরা জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবেন। অন্য পাঁচদল জোটের অন্যদের প্রতীকে অংশ নিতে পারেন। জোটের সূত্র জানিয়েছে, জোটের বৈঠকে এসব বিষয় চূড়ান্ত হবে।