পাহারাদার হওয়ার জন্য ঐক্যফ্রন্টে গেছি: কাদের সিদ্দিকী

কাদের সিদ্দিকী
কাদের সিদ্দিকী
>

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম। সম্প্রতি তিনি যোগ দিয়েছেন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত সরকারবিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। সমকালীন রাজনীতি নিয়ে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোর্শেদ নোমান

প্রথম আলো: কোন দিকে যাচ্ছে দেশ? বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
কাদের সিদ্দিকী: আলোচনার পর নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় দেশে স্বস্তির নিশ্বাস পড়েছে। ২০১৫ সালে সংলাপের দাবিতে মতিঝিলের ফুটপাতে টানা ৬৪ দিন অবস্থান নিয়েছিলাম। সেদিন খালেদা জিয়া বা শেখ হাসিনা—কেউই আমার কথা শোনেননি। খালেদা জিয়ার কাছে দাবি ছিল, অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহার করে মানুষ বাঁচান।
এবার সংলাপ শুরুর পর দেশের অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। পারস্পরিক গালাগাল বন্ধ হয়েছে। এখন ছাল-বাকলও বলা হচ্ছে না, বদু চাচার সঙ্গেও বসা হয়। যাদের গায়ে পোড়া গন্ধ পাওয়া যায় বলা হয়েছে, তাদের সঙ্গেও বসা হয়েছে। এটাই রাজনীতি।
শেখ হাসিনা সংলাপে বলেছেন, রাজনৈতিক কারণে কাউকে আর গ্রেপ্তার করা হবে না। প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেওয়ার পরও কে এমন দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী আছেন যে তাঁর এ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে গ্রেপ্তার হচ্ছে? বিএনপি আমলে না হয় হাওয়া ভবন ছিল, এখনো কি হাওয়া ভবন আছে?

প্রথম আলো: সংলাপ বা আলোচনার বিষয়টি কীভাবে দেখেন? আগামী নির্বাচনের ভবিষ্যৎ কী?
কাদের সিদ্দিকী: একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শেখ হাসিনা। এই আলোচনায় যদি না যেতেন, তাহলে যেদিন তিনি ক্ষমতা ছাড়তেন, সেদিন থেকে পৃথিবীময় তিনি মহিলা স্বৈরশাসক হিসেবে পরিচিত হতেন।
যদি শেখ হাসিনা নির্বাচনে হেরে যান এবং তাঁর ওপর কোনো নির্যাতন হয়, আমি সেদিন প্রথম ব্যক্তি হিসেবে প্রতিবাদ করব। এক সময় আমিই বলেছি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারালে কম করে তিন লাখ লোক মারা যাবে। তা যাতে না হয়, আওয়ামী লীগের একটি লোকের গায়ে যাতে হাত দিতে না পারে, সে জন্য ঐক্যফ্রন্টে গেছি; পাহারাদার হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য।
আরেকটি কথা বলে রাখি, বেগম খালেদা জিয়া আমার পছন্দের কেউ নন, আবার অপছন্দেরও নন। কিন্তু তাঁকে এ সময়ে এভাবে অযৌক্তিক মামলায় জেলে রাখা মানুষ পছন্দ করছে না। এ জন্য আমি খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই না। কারণ, তিনি জেলে গিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন।

প্রথম আলো: নিজেকে বঙ্গবন্ধুর চতুর্থ ছেলে হিসেবে পরিচয় দিয়েও আওয়ামী লীগের পাশে নেই কেন?
কাদের সিদ্দিকী: আমি যেটা বলি, সেটা হৃদয় দিয়ে বলি। এটা প্রমাণ করতে জাতিসংঘে যেতে হবে না। আর আপনি আওয়ামী লীগের কথা বলছেন, বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যার পথ তৈরি করেছে, যারা হত্যা করিয়েছে, তারাই তো এখন শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে।

প্রথম আলো: ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিলেন কেন? যুক্তি কী?
কাদের সিদ্দিকী: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জাতিকে নিয়ে। এ ক্ষেত্রে ড. কামাল অনেক দূর এগিয়েছেন। আমি মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই। তা ছাড়া ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার বিষয়ে আমার দলের নেতাদের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

প্রথম আলো: আসন্ন নির্বাচনে আপনার অংশ নিতে বাধা আছে কি না?
কাদের সিদ্দিকী: দেখুন, দেশ তো একই নিয়মে চলার কথা। কাদের সিদ্দিকীর জন্য আলাদা কেন? ঋণ পুনঃ তফসিল দেখানোর পর সেটা কুঋণ হয় কীভাবে? ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানাল, ঋণ পুনঃ তফসিল করা হয়েছে। যখন ভোটে দাঁড়ালাম, তখন বলা হলো, পুনঃ তফসিল হলেও এটা কুঋণ হিসেবে থাকবে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে। এ অবস্থায় আমি কোর্টে যেতে চাই। আর সব শেষে বলব, আমি নির্বাচনে দাঁড়াতে না পারলে কর্মী হিসেবে সারা দেশ চষে বেড়াব।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
কাদের সিদ্দিকী: আপনাকেও ধন্যবাদ।