আ.লীগের মনোনয়ন ফরম নিলেন ৪ 'ইয়াবা ব্যবসায়ী'

আবদুর রহমান বদি। ফাইল ছবি
আবদুর রহমান বদি। ফাইল ছবি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ২১ জন। তাঁদের মধ্যে চারজন রয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী।

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা এ চারজন হলেন বর্তমান সাংসদ আবদুর রহমান বদি, টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর আলম, ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভি রফিক উদ্দিন ও বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মৌলভি আজিজ উদ্দিন। এসব ব্যক্তির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা নিয়ে এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এলাকাবাসীর ধারণা, ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কালোটাকার কাছে হেরে যাচ্ছেন দলের ত্যাগী ও যোগ্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে এ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ২১ জন। তাঁদের মধ্যে টেকনাফের ১২ ও উখিয়ার ৯ জন। তাঁদের অন্তত ১৫ জন সাংসদ বদির পক্ষে ডামি মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে মনে করছেন দলের নেতা–কর্মীরা।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৭৩ জনের হালনাগাদ করা ‘ইয়াবা গডফাদারের’ তালিকায় সাংসদ বদির নাম ১ নম্বরে। জাফর আলম, মৌলভি আজিজ ও মৌলভি রফিকের (এ দুজন সহোদর) নাম যথাক্রমে ৬, ২৫ ও ২৬ নম্বরে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে তাঁদের কয়েকজনকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না।

এ আসন থেকে আরও যাঁরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন সাবেক সাংসদ ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী, সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর, কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য মো. শফিক মিয়া ও জেলা যুবলীগের সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর।

মোহাম্মদ আলী অভিযোগ করেন, সাংসদ বদির কারণে টেকনাফ আজ ইয়াবার উৎসভূমিতে পরিণত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে নিয়ে তিনি ইয়াবা ব্যবসা পরিচালনা করেন। আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে বদির কোনো সম্পর্ক নেই।

সোহেল আহমদ বলেন, ইয়াবার বদনাম থেকে টেকনাফ ও উখিয়ার মানুষকে দূরে রাখতে তিনি প্রার্থী হয়েছেন। কিন্তু মনোনয়ন বোর্ডে সাংসদ বদির পক্ষে সাফাই গাইতে ১০-১৫ জন ডামি মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়েছেন। কয়েকজন তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীর দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার বিষয়টি লজ্জাজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জাফর আলম ও মৌলভি রফিক উদ্দিন বলেন, নির্বাচন করার জন্যই দলের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। জনপ্রিয়তা না থাকলে তাঁরা জনপ্রতিনিধি হতে পারতেন না। ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গেও তাঁরা জড়িত নন।

ডামি প্রার্থী হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ওই দুজনই বলেন, তাঁরা ডামি প্রার্থী নন। তবে সাংসদ বদিই এ আসনের সবচেয়ে উপযুক্ত প্রার্থী।

এদিকে উখিয়া থেকেই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন নয়জন। তাঁদের উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির সভাপতি সাধনা দাশ গুপ্তা, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরী, মেজর (অব.) আবু তাহের ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী আহমদ।

হামিদুল হক সাংসদ বদির শ্বশুর এবং জাহাঙ্গীর কবির শ্যালক। জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ডামি প্রার্থী নয়, দলের মূল প্রার্থী হতে তিনি মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।

সাধনা দাশ বলেন, তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে দলের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হবে। ভোটাররাও হতাশ হবেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে সাংসদ বদির মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও তা বন্ধ পাওয়া গেছে।