আ.লীগের ফরম নিলেন ৪০২৩ জন

মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে আসা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সমর্থকেরা মিছিল করে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে।  ছবি: প্রথম আলো
মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে আসা আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সমর্থকেরা মিছিল করে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ের সামনের সড়কে অবস্থান নেন। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে। ছবি: প্রথম আলো
>

• গত শুক্রবার থেকে ফরম বিক্রি শুরু হয়।
• গতকাল সোমবার ছিল ফরম বিক্রির শেষ দিন
• এবার মনোনয়ন ফরম বিক্রি বেশি হয়েছে
• প্রতিটি ফরম ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়
• দলের তহবিলে জমা প্রায় ১২ কোটি টাকা
• মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীদের সাক্ষাৎকার কাল

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষ হয়েছে। আজ মঙ্গলবারও বিক্রীত ফরম জমা নেওয়া হবে। চার দিনে ৪ হাজার ২৩টি ফরম বিক্রি হয়েছে। গতকাল সোমবার ফরম বিক্রির শেষ দিনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড় ছিল কম। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দিনভর মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীরা বিক্ষিপ্তভাবে মিছিল নিয়ে আসেন।

গত শুক্রবার থেকে ফরম বিক্রি শুরু হয়। এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কেনার হিড়িক পড়ে। আলোচিত ব্যক্তি, তারকা, বড় ব্যবসায়ীরা রীতিমতো মহড়া দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেই জয় নিশ্চিত প্রার্থীদের অনেকের মধ্যে এমন ভাবনার কারণেও এবার মনোনয়ন ফরম বিক্রি বেশি হয়েছে।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারীদের সাক্ষাৎকার কাল বুধবার বেলা ১১টায় ধানমন্ডি কার্যালয়ে নেওয়া হবে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করবেন।

মনোনয়ন ফরম বিক্রির প্রথম তিন দিনে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ের আশপাশে ছিল উপচে পড়া ভিড়। মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের কর্মী-সমর্থকের দখলে ছিল পুরো রাস্তা। গত রোববার নেতা-কর্মীদের মিছিলের কারণে রাস্তার দুই পাশে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় সাধারণ মানুষকে। তবে গতকাল মনোনয়নপ্রত্যাশীদের চাপ কম থাকায় যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হয়।

সকাল ১০টা থেকে ফরম বিক্রি শুরু হয়। কিছুক্ষণ পরপর মিছিল নিয়ে বিভিন্ন আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আসতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুনসহ বিশাল মিছিল নিয়ে কার্যালয়ের সামনে আসেন পিরোজপুর-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ সাকীব বাদশার কর্মী-সমর্থকেরা।

মনোনয়ন ফরম নিতে আসা নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। নেতা-কর্মী ও সমর্থকের চাপ কম থাকায় মাইকে বলতে শোনা যায়, ‘আজ মাঠ ঠান্ডা হয়ে গেছে নাকি?’ দুপুরের পর মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ভিড় কিছুটা বাড়ে।

বেলা আড়াইটায় সাউন্ডবক্সে উচ্চ স্বরে গান বাজিয়ে, মোটরসাইকেলের বহর ও ছাদ খোলা জিপ নিয়ে ফরম তুলতে আসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক। পুরো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেন তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা।

রাস্তার ঠিক মাঝখানে জিপ দাঁড় করিয়ে চারপাশে ফুল ছিটাতে থাকেন মানিক। মাইকে নেতারা বলতে থাকেন, ‘মানিক, আপনার জিপ সাইড করেন। যানবাহন চলাচলে বাধা দেবেন না।’ একাধিকবার অনুরোধের পরে জিপ সড়কের মাঝে রেখেই মানিক নেমে যান। এ সময় সড়কের দুই পাশেই যানজট দেখা দেয়।

দুপুরে নেতা-কর্মীর বিশাল মিছিল নিয়ে ফরম তুলতে আসেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। ঢাকা-১৬ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম তোলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। বিকেলে দিনের সবচেয়ে বড় শোভাযাত্রা নিয়ে মনোনয়ন ফরম নিতে আসেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। শেষ বেলায় কিশোরগঞ্জ-১ আসনের জন্য মনোনয়ন তুলতে আসেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ছেলে রাসেল আহমেদ তুহিন।

গতকাল ঢাকার বাইরের বিভিন্ন আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ এলাকা থেকেও কর্মী-সমর্থক নিয়ে আসেন। লোকজন নিয়ে আসা পিকআপ, বাস, মাইক্রোবাস সাত মসজিদ রোডের দুই পাশে রাখা হয়। মোটরসাইকেল ও পিকআপ শোভাযাত্রা নিয়েও আসেন কিছু প্রার্থী।

বরিশালের উজিরপুর থেকে এসেছেন নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘মনোনয়নপ্রত্যাশী সবুজ মোল্লার সঙ্গে এসেছি। এলাকা থেকে শতাধিক লোক একসঙ্গে আসছি। যাতায়াত, থাকা, খাওয়া সবার খরচ প্রার্থী দিচ্ছেন।’

গতকাল সন্ধ্যায় ধানমন্ডি কার্যালয়ে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সাংবাদিকদের বলেন, ৪ দিনে ৪ হাজার ২৩টি ফরম বিক্রি হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টায় ফরম বিক্রি শেষ হয়। তবে আজ মঙ্গলবার বিক্রীত ফরম জমা দেওয়া যাবে।