তৃণমূলের মত নয়, প্রার্থী বাছাইয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে জরিপ

>

• দলীয় প্রধানের হাতে ছয় ধরনের জরিপের ফল আছে
• দলীয় মনোনয়নে জরিপের ফলই বেশি গুরুত্ব পাবে
• আজ মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে
• তবে এই সাক্ষাৎকার ব্যক্তি ধরে ধরে হবে না

প্রার্থী বাছাইয়ে আওয়ামী লীগ এবার তৃণমূল থেকে মতামত নেবে না। প্রার্থীদের প্রত্যেকের আলাদা করে সাক্ষাৎকারও নেওয়া হবে না। কোন্দল হতে পারে—এ আশঙ্কায় তৃণমূলের মতামত নেওয়া হচ্ছে না। আর সময়ের স্বল্পতা এবং বিপুল সংখ্যায় প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করার কারণে প্রত্যেকের আলাদা করে সাক্ষাৎকার হচ্ছে না।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলছে, দলীয় প্রধানের হাতে ছয় ধরনের জরিপের ফল আছে। দলীয় মনোনয়নে এ জরিপের ফলকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। শুধু জোট ও মিত্রদের আসন সমঝোতার বেলায় কিছুটা ছাড় দেওয়া লাগতে পারে। এ জন্য কে মনোনয়ন পাবেন, আর কে বঞ্চিত হবেন—তা নির্ভর করছে জোট ও মিত্রদের চাহিদা এবং জরিপের ওপর। ফলে তৃণমূলের মতামত নেওয়ার খুব একটা প্রয়োজন পড়ছে না।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকারের সব স্তরের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ঠিক করার ক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামত নেওয়ার কথা বলা আছে। স্থানীয় সরকারের সব স্তরের ভোটে তৃণমূল থেকে তালিকা নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে আগ্রহীদের, এমনকি জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে আছে, উপজেলা বা থানা, ইউনিয়ন, পৌর ওয়ার্ড ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের মনোনয়ন আগ্রহী প্রার্থীদের গুণাগুণ ও জনপ্রিয়তার বিষয়টি উল্লেখ করে একটি প্রার্থী তালিকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ডে পাঠাবে। বোর্ড একজনের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবে। কয়েক বছর ধরে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে তৃণমূল থেকে প্রার্থীর তালিকা চাওয়া হয়েছে। এরপর কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড একজনের নাম চূড়ান্ত করে তা প্রকাশ করেছে।

এবার এই পথে না হাঁটার কারণ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তৃণমূলের মতামত নেওয়ার অভিজ্ঞতা খুব ভালো নয়। সারা দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কমিটিগুলো মন্ত্রী-সাংসদদের দ্বারা প্রভাবিত। কোথাও কোথাও মন্ত্রী-সাংসদ নিজে উপজেলা বা জেলা কমিটির নেতা। ফলে মন্ত্রী-সাংসদের পছন্দ-অপছন্দই গুরুত্ব পেয়েছে। দলীয় প্রধানের করা জরিপের সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতাদের পাঠানো তালিকা মেলেনি। কোথাও কোথাও নাম পাঠানোর ক্ষেত্রে অর্থের লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে সংসদ নির্বাচনে স্থানীয়দের মতামত নিতে গেলে প্রকৃত চিত্র না-ও উঠে আসতে পারে। আবার অর্থের লেনদেনের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। এর বাইরে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দলীয় কোন্দল বেড়ে যেতে পারে। মনোনয়ন পাওয়া ব্যক্তি ও বঞ্চিতদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগও বিভক্ত হয়ে পড়তে পারে। আর সময় কম বলে বিভেদ মেটানোও কঠিন হয়ে যাবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, এবার মনোনয়নের ক্ষেত্রে দলীয় প্রধানের করা একাধিক জরিপ প্রতিবেদন মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। জনপ্রিয় ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীদের বেছে নেওয়ার কাজ চলছে। তৃণমূলের মতামত না নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, দলীয় প্রধান অনানুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলের নেতাদের মতামত নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ড ১১ সদস্যের মধ্যে দলীয় প্রধান, দলের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের নেতা পদাধিকারবলে সদস্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দল ও সংসদীয় দলের প্রধান। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পদাধিকারবলে সদস্য। বর্তমান সংসদীয় দলের সদস্যদের মধ্যে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত মারা গেছেন। ফলে তিনটি পদ খালি। গত সোমবার দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান ও রমেশ চন্দ্র সেনকে সংসদীয় বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সোমবার রাতেই গণভবনে বোর্ডের সদস্যরা অনানুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে আলোচনা করেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩০০ আসনের বিপরীতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন ৪ হাজার ২৩ জন।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি জানিয়েছে, আজ বুধবার বেলা ১১টায় দলের ধানমন্ডি কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। তবে এই সাক্ষাৎকার ব্যক্তি ধরে ধরে হবে না। জেলা বা বিভাগভিত্তিক আগ্রহীদের ডেকে যিনি মনোনয়ন পাবেন, তাঁর পক্ষে সবাইকে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হবে। আর আগ্রহী প্রার্থীরাও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন।

প্রার্থী বাছাইয়ের এই আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে চূড়ান্ত বাছাই প্রক্রিয়া শুরু হবে কাল বৃহস্পতিবার থেকে। ওই দিন সংসদীয় বোর্ডের বৈঠক হবে। টানা কয়েকটি বৈঠকে জরিপের ফল এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে বোর্ডের সদস্যদের মূল্যায়ন নিয়ে আলোচনা হবে। ২৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে চিঠি দেওয়া হতে পারে বলে সংসদীয় বোর্ডের সূত্র জানিয়েছে। পাশাপাশি জোট শরিক ও মিত্রদের আসন নিয়ে আলোচনা হবে।