রায়ের অনুলিপি পেয়েছেন খালেদার আইনজীবীরা

রায়ের অনুলিপি হাতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ছবি: আসাদুজ্জামান
রায়ের অনুলিপি হাতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ছবি: আসাদুজ্জামান

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছর দণ্ডিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের কাছে রায়ের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ মামলার রায়ের অনুলিপি খালেদার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়ার কাছে হস্তান্তর করেন। আদালতের পেশকার মোকাররম হোসেন প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের অনুলিপি পাওয়ায় যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়ার পক্ষে হাইকোর্টে আপিল করা হবে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। এর আগে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় একই আদালত তাঁকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেন। এর বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আপিল করেন। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) খালেদা জিয়ার সাজা বাড়ানোর আবেদন করে। গত ৩০ অক্টোবর খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ ৫ বছর থেকে ১০ বছর করেছেন হাইকোর্ট। দুই মামলায় দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হয়েছে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অপর দণ্ডিত তিন আসামি হলেন: খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের ব্যক্তিগত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও বিএনপির নেতা সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ব্যক্তিগত সহকারী সচিব মনিরুল ইসলাম। হারিছ পলাতক থাকলেও বাকি দুজন কারাগারে।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছেন আদালত। আর্থিক ক্ষতির ব্যাপারে সহযোগিতার দায়ে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় হারিছ, জিয়াউল ও মনিরুলকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্য গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।

শুনানি চলাকালে গত ২০ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচারক তাঁকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। সেদিন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে ওই মামলার বিচার কার্যক্রম চলবে বলে বিচারিক আদালত আদেশ দেন। এর বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে ১৪ অক্টোবর হাইকোর্ট আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেন। হাইকোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া লিভ টু আপিল করেন। খালেদা জিয়ার করা লিভ টু আপিল সেদিন সকালে খারিজ করে দেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানের নামে তাঁর তৎকালীন সেনানিবাসের বাড়ির ঠিকানায় নামসর্বস্ব জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করেন। খালেদা জিয়া, তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান ওই ট্রাস্টের ট্রাস্টি হয়েও চ্যারিটেবল কাজে কোনো অর্থ ব্যয় করেননি। বরং নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিগত সময়ে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ অর্থ সংগ্রহ করেন। অর্থ পরিচালনার দায়িত্বে থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ ব্যয় করেন তাঁর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী। হারিছের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) জিয়াউল ইসলাম এবং সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) মনিরুল ইসলাম পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারার অপরাধ করেছেন।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, বিএনপির তহবিল (ফান্ড) থেকে ৬ কোটি ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ টাকা পাওয়ার পরও খালেদা জিয়া জেনেশুনে ৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক দেন। দলের ফান্ডের অতিরিক্ত টাকা অবৈধভাবে সংগৃহীত হিসাবে জমা ছিল, তা তিনি জানতেন। ওই টাকার উৎস অবৈধ। সে কারণে মেট্রোমেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপারের ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকাকে বৈধ করার অপচেষ্টা করেছেন। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা আসামিরা অবৈধভাবে সংগ্রহ করেন এবং খরচ করেন।