এবারের নির্বাচন কঠিন, গা ভাসানো যাবে না: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
>

*মনোনয়ন পেতে চার হাজারের বেশি নেতা ফরম নিয়েছেন
*গণভবনে আ. লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ‘সাক্ষাৎকার’
*সাক্ষাৎকার কার্যত দিকনির্দেশনামূলক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়
*প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদের শুধু বক্তব্য দেন
*অনেকে বাদ পড়তে পারেন, সিদ্ধান্ত অমান্যে আজীবন বহিষ্কার
*স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মনোনয়ন পাবেন না

আগামী নির্বাচন খুব কঠিন ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। এ জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং গা ভাসিয়ে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল বুধবার গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের ‘সাক্ষাৎকার’ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এই আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে চার হাজারের বেশি নেতা ফরম সংগ্রহ করেছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা এত বেশি হওয়ায় সাক্ষাৎকারের আয়োজন কার্যত দিকনির্দেশনামূলক অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শুধু বক্তব্য দেন। আগ্রহীরা কেউ বক্তব্য রাখার সুযোগ পাননি। এ অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া আট মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা জানান, দল হারলে পরিণতি কী হবে, অতীতে দলের পরাজয়ে কী হয়েছে—দলীয় প্রধানের বক্তব্যে এসব বিষয় বারবার উঠে এসেছে।

বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, মনোনয়নবঞ্চিত হলেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক জ্যেষ্ঠ নেতাও বাদ যেতে পারেন। এতে কিছু করার নেই। এটা মেনে নিতে হবে। একটা আসন হারিয়ে দিই, অন্যগুলোতে জিতবেই এমন করবেন না কেউ। এটা করলে দেখা যাবে ৩০০ আসনে দল হেরে গেছে।’ ৯১ সালের মতো গা ভাসিয়ে দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে, দল হেরে গেলে কারও পিঠের চামড়া থাকবে না।

এবার নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও কঠিন হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি অনেকগুলো সমীক্ষা করেছেন। দেখা গেছে কোনো আসনে ব্যক্তি জনপ্রিয়, দল কিছুটা পিছিয়ে আছে। কোথাও দল এগিয়ে, ব্যক্তি পিছিয়ে। এ ক্ষেত্রে সমীক্ষা প্রতিবেদন দেখে সমন্বয় করে প্রার্থী ঠিক করা হবে। যাঁরা দলের বাইরে ভোট টানতে পারেন, তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে গত মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বেলা ১১টায় ধানমন্ডি কার্যালয়ে সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। পরে জানা যায়, অনুষ্ঠানটি হবে গণভবনে। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর গণভবনে দলীয় কর্মসূচি পালন করলে তা আচরণবিধির লঙ্ঘন হয় কি না, এই ভাবনায় ছিলেন নেতারা। অনুষ্ঠান শেষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডি কার্যালয়ে গিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন।

এবার তরুণদের বেশি করে মনোনয়ন দেওয়ার ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ তরুণ। মনোনয়নের ক্ষেত্রে এর প্রতিফলন থাকবে। কাউকে আত্মতুষ্টিতে ভোগা যাবে না।

স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মনোনয়ন না দেওয়ার ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা এক জায়গায় আছেন, তাঁরা তো আছেনই। এক ব্যক্তিকে দুই পদ দেওয়া ঠিক হবে না।

বক্তব্যের শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন, সবাই যোগ্য প্রার্থী। কিন্তু এর মধ্য থেকে প্রতি আসনে একজনকে বেছে নিতে হবে। এরপরও সবার সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ ছিল। কিন্তু এটা করতে গেলে তিন মাস লেগে যাবে। এ জন্যই সবাইকে একসঙ্গে ডেকে কথা বলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণভবনে সবাইকে দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবারও ক্ষমতায় এলে আপনারা এখানে আসবেন। মনোনয়নপ্রাপ্ত, বঞ্চিত এবং নির্বাচনে জয়ী সবার জন্যই উন্মুক্ত।

শেখ হাসিনা বলেন, আগের মতো নির্বাচনে সবার দায়িত্ব নিতে পারব না। এবার নেত্রীকে বেটে খাওয়ালেও কাজ হবে না। গত দুই নির্বাচনে এনেছি, এবারও আমিই ক্ষমতায় আনব, এটা মনে করে কোনো লাভ নেই। প্রার্থীর নিজ নিজ যোগ্যতা, দক্ষতা, রাজনৈতিক ত্যাগ-তিতিক্ষা থাকতে হবে। জনসম্পৃক্ত হতে হবে।

বিভিন্ন আসনে অস্বাভাবিক হারে মনোনয়ন ফরম বিক্রির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে নেতৃত্ব শূন্যতা রয়েছে, সেখানে যত বড় নেতাই হোক না কেন, তারা দল সংগঠিত করতে পারে নাই। এটা তাদের নেতৃত্বশূন্যতার প্রমাণ। ক্ষমতায় এলে অনেক পদ সৃষ্টি করা হবে। তখন সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পরিস্থিতিও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থন আছে, কর্মী আছে, ভোট আছে। কিন্তু কর্মীদের দৃশ্যমান হতে হবে।

ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টসহ অন্য দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। আরও ৭০টি দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছে। তিনি কারও বিরুদ্ধে বলতে চান না। তবে এখনো অনেকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। তিনি বলেন, অশনিসংকেত দেখা যাচ্ছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

উপস্থিত একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী জানান, শুরুতেই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রার্থীদের এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, এবার শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য কাউকে বহিষ্কার করা হলে আজীবনের জন্য করা হবে। যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, তাঁকে মানবেন কি না তা জানতে চান তিনি। এ সময় উপস্থিত মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হাত তুলে সায় দেন।

দলের সিদ্ধান্ত না মানলে বহিষ্কার
ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ধানমন্ডিতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জায়গা দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে সেটি পরিবর্তন করা হয়েছে। সবাই দলীয় সভাপতির দোয়া নিতে চান। পরে গণভবনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেছেন, ঐক্যবদ্ধ থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। প্রার্থীরাও কথা দিয়েছেন ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। ঐক্যবদ্ধ না থেকে কেউ যদি দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যান, তাহলে তাঁকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে বলে দলীয় প্রধান জানিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিভিন্ন জরিপ, প্রতিবেদন, আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন, সমীক্ষা—সব আওয়ামী লীগের পক্ষে এসেছে। তারুণ্যের শক্তি ও নারীরা এবার আওয়ামী লীগের বিজয়ের হাতিয়ার হবে। এ সময় বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপির দেখানোর মতো কোনো কাজ নেই। এমন কোনো উন্নয়ন-অর্জন বিএনপির নেই, যা দেখিয়ে বিএনপি নির্বাচনে ফায়দা লুটতে পারে। জনগণ শেখ হাসিনার উন্নয়ন-অর্জনে খুশি। নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ আশাবাদী।

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী কাদের বলেন, দলের উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র ও তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এরপরও কেউ মনোনয়ন ফরম কিনে থাকতে পারেন, তবে তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হবে না।