স্বেচ্ছায় গেলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) দেওয়া প্রতিবেদন প্রত্যাবাসনের অনুকূলে না বলে মন্তব্য করেছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মাদ আবুল কালাম।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উখিয়াতে সাংবাদিকদের মোহাম্মাদ আবুল কালাম বলেন, ‘আমরা এখন টেকনাফের ২২ নম্বর ক্যাম্প উঞ্চিপ্রাংয়ে যাচ্ছি। সেখানে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত। তাদের সঙ্গে কথা বলব। তারা স্বেচ্ছায় যেতে চাইলে প্রত্যাবাসন শুরু হবে—দিনের যেকোনো সময়। ওদিকে মিয়ানমারও প্রস্তুত আছে।’

১৫০ জনের প্রথম দলকে দিয়ে আজ বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা রয়েছে। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ঘাট এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ঘাট দুটি পরিদর্শন করে সেখানে প্রত্যাবাসনের জন্য কোনো রোহিঙ্গাকে দেখা যায়নি। টেকনাফের ঘাটে কয়েকজন আনসার সদস্য ট্রানজিট ক্যাম্পটি পাহারা দিচ্ছেন। নাফ নদীতে রোহিঙ্গা পারাপারের কোনো নৌকা বা ট্রলারও দেখা যায়নি।

প্রত্যাবাসন করতে হলে এখান থেকে নৌকা নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার নদী পার হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে নিতে হবে। ওদিকে ঘুমধুম সীমান্তে ট্রানজিট ক্যাম্পটিও ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখানে কয়েকজন বিজিবি সদস্য টহলে আছেন। এখান থেকে স্থলপথে বাংলাদেশ–মিয়ানমার মৈত্রী সেতু পার হয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের কথা।

উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা সংখ্যা এখন ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৫৪। এর মধ্যে গত বছরের ২৫ আগস্টের পর এসেছে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। আজ প্রথম দিন ৩০ পরিবারের ১৫০ জনকে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত করা হলেও অনেকেই তাতে রাজি না।

রোহিঙ্গাদের দাবি, তাদের প্রত্যাবাসনের আগে তাদের নাগরিকত্ব প্রদান, মিয়ানমারে ফেলে আসা বসতভিটা ও সম্পদ ফেরত, ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না হলে তারা ফিরে যাবে না। অনেকেই প্রত্যাবাসন–আতঙ্কে ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে। এ বিষয় নিয়ে স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের ভাষ্য হলো, মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।

এর আগে আজ সকালে আবুল কালাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আমরা ট্রানজিট ক্যাম্পের দিকে যাচ্ছি।’ প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গারা এখনই রাখাইনে ফিরে যেতে আগ্রহী নয় বলে উল্লেখ করে ইউএনএইচসিআর গত দুই দিন ৫০টি রোহিঙ্গা পরিবারের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এ বিষয়ে মতামত জানতে গতকাল বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনটির যাচাই-বাছাই চলছে। ঢাকায় থেকে খবর এলেই এক ঘণ্টার মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু করা যাবে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার বলেন, রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য ৩০ পরিবারের ১৫০ জন রোহিঙ্গা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আজ তাদের প্রত্যাবাসন শুরু করার প্রস্তুতি তাঁদের আছে।

গতকাল সন্ধ্যায় ইউএনএইচসিআর যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তারপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু নিয়ে সংশয় দেখা দেয়।