চ্যালেঞ্জের মুখে তরিকুলের পরিবার

অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সৈয়দ সাবেরুল হক, মারুফুল ইসলাম
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সৈয়দ সাবেরুল হক, মারুফুল ইসলাম
>

*তরিকুল মারা যাওয়ার আগে ছেলে অমিতকে দলে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন
*অমিত দলের খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন
*অমিতের পাশাপাশি আরও দুজন জনপ্রিয় নেতা এবার ফরম তুলেছেন

নির্বাচনের আগেই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে সদ্য প্রয়াত বিএনপির প্রতাপশালী নেতা তরিকুল ইসলামের পরিবারকে। দক্ষিণাঞ্চলে বিএনপির রাজনীতিতে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারকারী এ পরিবারের বাইরে এর আগে কিছুই হয়নি। তবে এবার পরিবারটির চাওয়ার বাইরে গিয়ে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন দলের প্রভাবশালী দুই নেতা। যশোর-৩ (সদর) আসনে তাঁরা দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল যশোর-৩ (সদর) আসন থেকে একাধিকবার নির্বাচিত সাংসদ। আবার সাংসদ নির্বাচিত না হয়েও তিনি মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলে তাঁর চাওয়ার বাইরে এযাবৎকালে কিছুই হয়নি। সম্প্রতি তিনি প্রয়াত হয়েছেন। তবে তিনি মারা যাওয়ার আগে ছেলে অমিতকে দলে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। অমিত বর্তমানে দলের খুলনা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।

এবারের সংসদ নির্বাচনে অমিত যশোর-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু তাঁকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে আরও দুজন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁরা হলেন যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক ও যশোর শহর বিএনপির সভাপতি মারুফুল ইসলাম। মারুফুল যশোর পৌরসভার মেয়র ছিলেন। সৈয়দ সাবেরুল হক ছিলেন ১৯৯২ সালে যশোর সদর উপজেলার উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। দুজনই জনপ্রিয় নেতা।

তরিকুল–বলয়ের বাইরে দলের মধ্যেই এত দিন একটি চাপা ক্ষোভ ছিল। কিন্তু তাঁর একক প্রভাবের কারণে সেটি কখনো প্রকাশ পায়নি। নির্বাচন ঘিরে এখন সেই ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে।

এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে দলের শীর্ষ নেতারা তরিকুলের বাসভবনে গিয়ে অমিতের হাতে দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুল হুদা, সহসভাপতি রফিকুল রহমান, জাফর সাদিক, মোহম্মদ ইসহক ও গোলাম মোস্তফা, যুগ্ম সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, আইনবিষয়ক সম্পাদক এম এ গফুর প্রমুখ।

জানতে চাইলে অমিত বলেন, যশোর সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের নেতারা ঢাকায় গিয়ে দলীয় কার্যালয় থেকে তাঁর জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। তিনি আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় গিয়ে মনোনয়ন ফরম জমা দেবেন বলে আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত যশোর সদর আসন থেকে দলের আরও দুজন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এতে চ্যালেঞ্জের কোনো বিষয় আমি দেখি না। বিএনপি বড় দল। যোগ্য প্রার্থী অনেকেই আছেন। প্রতিটি আসনে প্রতিটি দলের ক্ষেত্রে এমন অবস্থা রয়েছে।’

অমিত আরও বলেন, ‘এত দিন আব্বুর (তরিকুল ইসলাম) ব্যক্তিত্ব ও তাঁর প্রজ্ঞার কারণে কেউ তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়াননি। এখন তো পরিস্থিতি ভিন্ন। অনেকে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে চাইবেন। মতবিরোধ থাকলেও দিন শেষে সব ঠিক হয়ে যাবে।’

যোগাযোগ করলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, ‘শক্তিশালী বলয়ের কারণে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা মুখ খুলতে এত দিন সাহস দেখাননি। তাঁরা সবাই আমার সঙ্গে আছেন। এর আগেও আমি তিনবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েছি। কিন্তু পাইনি। এবার আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

দলের ভেতরে বিরোধ থাকলেও মনোনয়ন পাওয়ার পরে সেই বিরোধ থাকবে না বলে আশা করেন সৈয়দ সাবেরুল।

ফোন না ধরায় এ ব্যাপারে মারুফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।