মনোনয়ন লড়াইয়ে শত প্রবাসী

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, এম এ সালাম, সুশান্ত দাস গুপ্ত, ইকবাল হোসাইন, শরীফুল ইসলাম সাজু
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, এম এ সালাম, সুশান্ত দাস গুপ্ত, ইকবাল হোসাইন, শরীফুল ইসলাম সাজু
>

*সিলেট বিভাগের চার জেলায় ১৯টি আসন
*বেশির ভাগেই আছেন প্রবাসী মনোনয়নপ্রত্যাশী
*দলীয় ফরমও নিয়েছেন অনেকে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের চার জেলায় সংসদীয় আসন রয়েছে ১৯টি। বিভাগের বেশির ভাগ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি। তাঁদের মধ্যে অনেকে ইতিমধ্যে দেশে ফিরে বিভিন্ন দল থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। অনানুষ্ঠানিকভাবে গণসংযোগও শুরু করেছেন তাঁরা।

প্রবাসী বাংলাদেশি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এই তালিকায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও রয়েছেন। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেতে অনেকে আবার দলগুলোর কেন্দ্রীয় পর্যায়ে জোর তদবির করছেন।

সিলেট দেশের প্রবাসী-অধ্যুষিত অঞ্চল। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে সিলেটের প্রায় ২৫ লাখ লোক বসবাস করছেন বলে জানা গেছে। এই প্রবাসী মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বলছেন, তাঁরা বিদেশে থাকলেও দেশের রাজনীতিতে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। তাঁরা নিজেদের অবস্থানস্থলে পছন্দের দলের জন্য কাজ করছেন। নিজ এলাকার সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখার মানসিকতা থেকেই তাঁরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী।

বিভিন্ন এলাকার অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে অন্তত ১০ জন নেতা বেশ কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বিরতিতে দেশে এসে স্থানীয়ভাবে দল গোছানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। এলাকায় তাঁদের গ্রহণযোগ্যতাও আছে।

উল্লেখযোগ্য প্রবাসী মনোনয়নপ্রত্যাশী

সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে প্রবাসী মনোনয়নপ্রত্যাশীরা আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, কার্ডিফ শাখার সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শাহজাহান, সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী।

সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনে রয়েছেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া (স্বতন্ত্র), আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব ও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ মনির হোসাইন, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপির নেতা ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এম এ সালাম।

সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর) আসনে রয়েছেন আওয়ামী লীগের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট) আসনে বিএনপির যুক্তরাষ্ট্র শাখার সহসভাপতি শরীফ আহমদ লস্কর। সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার) আসনে আওয়ামী লীগের কানাডা শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি সরওয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের ফ্রান্স শাখার উপদেষ্টা চৌধুরী সালেহ আহমদ, আওয়ামী লীগ লন্ডন শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফছার খান ও নিউ জার্সি শাখার সাধারণ সম্পাদক সফিক উদ্দিন।

সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ ও ধরমপাশা) আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপি আইনজীবী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হামিদুল হক আফিন্দি। সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনে সিলেটের এমসি কলেজের সাবেক ভিপি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা ইকবাল হোসাইন, বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য তাহির রায়হান চৌধুরী, ইস্ট মিডল্যান্ড রিজিওনাল বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও যুক্তরাজ্য জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উপদেষ্টা মো. আবদুল মজিদ তাহের, শ্রমিক লীগ যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি শামছুল হক চৌধুরী ও আওয়ামী লীগ কুয়েত শাখার সাংগঠনিক উপদেষ্টা মো. ছায়েদ আলী মাহবুব হোসেন। সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও জগন্নাথপুর) আসনে আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার নেতা সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী সৈয়দ আবুল কাশেম ও বিএনপির নেতা এম এম সাত্তার।

মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী) আসনে বিএনপি কাতার শাখার সদস্যসচিব শরীফুল হক সাজু। মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য শাখার তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কামাল হাসান। মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) আসনে যুক্তরাজ্যের সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা এম এ রহিম।

হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতা সুশান্ত দাস গুপ্ত মনোনয়নপ্রত্যাশী।

আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও দলটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছি। সেখানকার মানুষের সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছি। গত সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলাম। মনোনয়ন না পেলেও আমি সব সময় এলাকাবাসীর পাশে ছিলাম।’

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলটির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে আমি দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্র থেকে শুরু করে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছি। সভা-সমাবেশ করেছি। দেশের টান থেকে নির্বাচন করতে চাই।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রবাসীরাও দলে সক্রিয় আছেন। তাই আমাদের পর্যবেক্ষণ, দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ও প্রকৃত কর্মীদের যেন মনোনয়ন দেওয়া হয়। উড়ে এসে জুড়ে বসে যেন কেউ মনোনয়ন না পান, সেটা দলগুলোকেই নিশ্চিত করতে হবে।’