আ.লীগে দ্বন্দ্ব, নির্ভার বিএনপি

উপরের বাম দিক থেকে আবদুল মঈন খান,আনোয়ারুল আশরাফ খান,আলতামাশ কবির,জায়েদুল কবির,কামরুল আশরাফ খান
উপরের বাম দিক থেকে আবদুল মঈন খান,আনোয়ারুল আশরাফ খান,আলতামাশ কবির,জায়েদুল কবির,কামরুল আশরাফ খান

নরসিংদী-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন পাঁচজন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন চান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীও। এতে আওয়ামী লীগে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও মহাজোটের শরিকদের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে বিএনপি। আসনটিতে বিএনপির একক প্রার্থী দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।

নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চারটি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও নরসিংদী সদরের তিনটি ইউনিয়নের একাংশ নিয়ে নরসিংদী-২ নির্বাচনী এলাকা। আয়তন ৯৪ দশমিক ৪৩ বর্গকিলোমিটার। মোট ভোটার ২ লাখ ২৬ হাজার ৬০০ জন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হন বিএনপির প্রার্থী আবদুল মঈন খান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুল আশরাফ খানের কাছে পরাজিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আনোয়ারুল আশরাফ খান দলীয় মনোনয়ন পাননি। এই আসনে মহাজোট থেকে নৌকা প্রতীক পান জাসদের নরসিংদী জেলা সভাপতি জায়েদুল কবির। এতে আনোয়ারুল আশরাফ খান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু তাঁর সহোদর কামরুল আশরাফ খান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হন।

আওয়ামী লীগের পাঁচ প্রার্থী, জোটে দ্বন্দ্ব

২০০৪ সাল থেকে পলাশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সাবেক সাংসদ আনোয়ারুল আশরাফ খান। সাবেক এই সাংসদের স্ত্রী আফরোজা দিলীপ পলাশ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ভাগনে আল মুজাহিদ হোসেন উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক, ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুল হক আনোয়ারুল আশরাফের স্ত্রীর বড় ভাই, চরসিন্দুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন সাবেক সাংসদের বোনের দেবর। এ ছাড়া নরসিংদী-২ আসনের বর্তমান সাংসদ কামরুল আশরাফ খান (সাবেক সাংসদের ভাই) উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি।

স্থানীয় কয়েকজন নেতা বলেন, মূলত সাবেক সাংসদ আনোয়ারুল আশরাফ খান ও তাঁর পরিবারের ইশারাতেই চলে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। এই পরিবারের একক আধিপত্যের কারণে আওয়ামী লীগের একটি অংশে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই অংশের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ মো. ইলিয়াছ। এবার দুজনই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়া দৈনিক সংবাদ-এর সম্পাদক আলতামাশ কবির, পলাশ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মমিন এবং ইকবাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।

দলীয় সূত্র জানায়, ইলিয়াছ ও মমিন দলীয় মনোনয়ন না পেলে আলতামাশ কবিরের পক্ষে কাজ করতে পারেন।

এদিকে জেলা জাসদের সভাপতি জায়েদুল কবির এই আসন থেকে নির্বাচন করতে চান। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চান দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান। তাঁরা মহাজোট থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে জায়েদুল মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। সে সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল আশরাফ খান নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চেয়েও মনোনয়ন পাননি। দলীয় সূত্র জানায়, নিজে নির্বাচন করতে না পেরে ছোট ভাই কামরুল আশরাফ খানকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। নিজেও কাজ করেন ভাইয়ের পক্ষে। এতে মহাজোটের প্রার্থী পরাজিত হন, বিজয়ী হন কামরুল। আসন্ন নির্বাচনে কামরুল নির্বাচন করতে চান না। তিনি চান তাঁর বড় ভাই নির্বাচন করুন। কিন্তু এবারও ২০১৪ সালের মতো আনোয়ারুল আশরাফ খান মনোনয়ন না পেলে এই পরিবারেরই কেউ না কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন। এ নিয়ে মহাজোটের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি আছে।

জানতে চাইলে জায়েদুল কবির বলেন, ‘সব দলের অংশগ্রহণে ভালো নির্বাচন হবে। আশা করছি, মহাজোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পাব।’


বিএনপির একক প্রার্থী

এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।
দলীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাঁরা নানা দিক দিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। দলীয় কর্মসূচিও পালন করতে পারেননি। তবে গত দু-এক দিনে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে।
জানতে চাইলে ঘোড়াশাল পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও পলাশ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলম মোল্লা বলেন, ৩০-৪০টি গায়েবি মামলায় কয়েক শ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ, প্রশাসন ও প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কারণে তাঁরা দলীয় কোনো কর্মসূচিই পালন করতে পারেন না। তাঁর দাবি, নির্বাচনী মাঠে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের হয়রানি না করা হলে, পুলিশ ও প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকলে বিএনপি বিজয়ী হবে।