সাহারার অনুসারীরাই প্রতিপক্ষ, বিএনপির প্রার্থী ঠিক হয়নি

সাহারা খাতুন ও এস এম জাহাঙ্গীর
সাহারা খাতুন ও এস এম জাহাঙ্গীর

ঢাকা-১৮ আসনের বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। তবে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে প্রায় ১৪ জন আওয়ামী লীগের হয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের প্রায় সবাই একসময় সাহারা খাতুনের অনুসারী ছিলেন। তবে আওয়ামী লীগ থেকে সাহারা খাতুনকেই মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভাবনা প্রকট বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

অন্যদিকে এই আসনে বিএনপি থেকেও প্রায় ১৫ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়টি এখনো পরিষ্কার হয়নি।

আয়তন ও ভোটারের দিক থেকে রাজধানীর সবচেয়ে বড় আসন ঢাকা-১৮। এই আসনে উত্তরা পূর্ব, উত্তরা পশ্চিম, উত্তরখান, দক্ষিণখান, বিমানবন্দর, তুরাগ, খিলক্ষেত—এই সাতটি থানা। বাসিন্দাদের বেশির ভাগই শিক্ষিত ও মধ্যবিত্ত। মোট ভোটার ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৪৭ জন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এত দিন যাঁরা সাহারা খাতুনের সঙ্গে ছিলেন, তাঁরাই এখন প্রতিপক্ষের ভূমিকায় নেমেছেন। এসব নেতা-কর্মীই তাঁর প্রতিপক্ষ হিসেবে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এ তালিকায় আছেন যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তার, তাঁতি লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক জাহিদুল মেম্বার, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাবিব হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এস এম তোফাজ্জল হোসেন, সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক এস এম মাহবুব, সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন ও মফিজ উদ্দিন ব্যাপারী, সদস্য আবদুল ওয়াসেক ও আনোয়ারুল ইসলাম, উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দিন, ঢাকা জেলা পরিষদ সদস্য যুবরাজ, উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সাঈদুর রহমান, খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কেরামত আলী দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক আসলাম উদ্দিন। তাঁদের মধ্যে হাবিব হাসান প্রকাশ্যেই সাহারা খাতুনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

জানতে চাইলে হাবিব হাসান বলেন, ‘সাহারা আপার সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। তবে যেখানে আছি সেখান থেকে আরেকটু ভালো অবস্থানে যেতে চাই।’ আরেকজন সাইদুর রহমান সরকার বলেন, হাবিব হাসান টাকা খরচ করে বিভিন্ন নেতার নামে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন এমন সংবাদ পেয়ে তিনিও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে যাঁরা ফরম কিনেছেন, তাঁদের অনেকেই আর জমা দেননি।

নাজমা আক্তার বলেন, তৃণমূলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো। তিনি মনে করেন, ভোটারদের মন জয় করতে পারবেন।

সাহারা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, গত ১০ বছরে তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে ছিলেন। আগামী দিনে তিনি মনোনয়ন পেলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন বলে জানান।

জোট না বিএনপির প্রার্থী?

এই আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি খুলনা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে। এবার বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর (অব.) কামরুল ইসলামের নাম শোনা গেলেও গতকাল বুধবার বিএনপির মনোনয়ন বিক্রির তৃতীয় দিনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেননি। তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্যার দেশের বাইরে আছেন। আজ-কালের মধ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করবেন।’

গত তিন দিনে এই আসন থেকে ১৫ জন বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এ এন এইচ আখতার হোসেন, সহসভাপতি শাহীনুর আলম, সহসাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, দক্ষিণখান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খলিল মোল্লা প্রমুখ।

স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলেছেন, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এস এম জাহাঙ্গীর গত কয়েক বছরে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীকে নিয়ে গত মঙ্গলবার নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।

এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ২৫৭টি মামলা আছে। খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার আন্দোলনের অংশ হিসেবে তিনি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে জানান।

এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকি এই আসন থেকে নির্বাচন করছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-১৮ আসন থেকে নির্বাচন করার বিষয়টি তিনি বিবেচনায় রেখেছেন।

তবে এই আসনে বিএনপির কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, নাকি জোটের শরিকদের ছেড়ে দেওয়া হবে তা এখনো ঠিক হয়নি।