দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হলে আসন সমঝোতা

>
  • আজ থেকে বিএনপির প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার
  • ২১ নভেম্বর নাগাদ সাক্ষাৎকার শেষ হবে
  • ২৬ ও ২৭ নভেম্বর প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে
  • জামায়াতক ২০–২২ আসন দেওয়া হতে পারে

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে ২৩-২৪ নভেম্বরের দিকে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করবে বিএনপি। শরিকদের কাকে কত বা কোন কোন আসন দেওয়া হবে, সে আলোচনা এখনো শুরু হয়নি। প্রাথমিক আলোচনা চলছে। দুই জোটের শরিক দলগুলো নিজেদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা বিএনপির হাতে দিতে শুরু করেছে।

দলটির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলের সঙ্গে আসন সমঝোতার আগে বিএনপি নিজেদের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে। এ লক্ষ্যে আজ রোববার থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হচ্ছে। ২১ নভেম্বর নাগাদ সাক্ষাৎকার শেষ হবে। এরপর ২৬ ও ২৭ নভেম্বর জোট মনোনীত প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের জন্য প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল নয়টা থেকে আগ্রহী প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হবে। সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা থাকবেন। এ ছাড়া মনোনয়ন বোর্ডে সংশ্লিষ্ট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত থাকবেন।

আজ সাক্ষাৎকার গ্রহণের প্রথম দিনে সকালে রংপুর বিভাগ, বিকেলে রাজশাহী বিভাগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎ নেওয়া হবে। পঞ্চগড়-১ আসন দিয়ে সাক্ষাৎকার গ্রহণ শুরু হবে। ১৯ নভেম্বর সকালে বরিশাল, বিকেলে খুলনা বিভাগ, ২০ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম, বিকেলে সিলেট বিভাগ, ২১ নভেম্বর সকালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ এবং বিকেলে ঢাকা বিভাগের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্বাচন পরিচালনা ও প্রার্থিতা সমন্বয় করার লক্ষ্যে গত শুক্রবার রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা গুলশানের কার্যালয়ে বৈঠক করেন। সেখানে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কারা, কোথায় নির্বাচন করতে আগ্রহী, তা জানাতে বলা হয়েছে।

ইতিমধ্যে ২০-দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর কাছ থেকে বিএনপি প্রার্থী তালিকা চেয়েছে। জোটের পক্ষ থেকে ‘অঙ্গীকারনামা’ শিরোনামে তৈরি করা একটি ফরমও সরবরাহ করা হয়েছে। অঙ্গীকারনামায় তিনটি বিষয় থাকছে। (ক) ২০-দলীয় জোটের আদর্শ ও রাজনীতির প্রতি নিয়োজিত থাকা। (খ) জোটের সিদ্ধান্ত মেনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার এবং সংসদ থেকে পদত্যাগ। (গ) জোটের প্রার্থী হিসেবে সাংসদ হলে জোট পরিবর্তন কিংবা জোটের নেতা-নেত্রীর সম্মতি বা সিদ্ধান্ত ছাড়া নির্দিষ্ট আসন পরিবর্তন বা অন্য কোনো দলের সঙ্গে সংঘবদ্ধ, জোট গঠন, জোটে যোগদান বা কোয়ালিশনে না যাওয়া।

জামায়াতকে ২০ আসন

বিএনপি ও ২০ দলের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে ২০ দলের বড় শরিক জামায়াতে ইসলামীর এখনো আসন সমঝোতা হয়নি। তবে দলটি জাতীয় সংসদের ৬১টি আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতিমধ্যে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এবার জামায়াতকে ২০ থেকে ২২টি আসন দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

জামায়াতের পর জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ১৬ জনের এবং অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ১২ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা দিয়েছে। জাতীয় পার্টি (জাফর) আশা করে, তারা অন্তত পাঁচ-ছয়টি আসন পাবে। এর মধ্যে মোস্তফা জামাল হায়দার (পিরোজপুর-১), টি আই এম ফজলে রাব্বী (গাইবান্ধা-৩), নওয়াব আলী আব্বাস খান (মৌলভীবাজার-২) নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী বলে দলটি দাবি করে। অবশ্য নওয়াব আলী আব্বাস খান এরই মধ্যে (মৌলভীবাজার-২) আসন থেকে এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তিনি ওই আসনের সাবেক সাংসদ। এ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সম্ভাব্য প্রার্থী সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।

এ ছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দল গণফোরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), নাগরিক ঐক্য আলাদা তালিকা তৈরি করছে। মাহমদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য গতকাল ৩৫ জন প্রার্থীর একটি তালিকা গণমাধ্যমে পাঠিয়েছে। কথা বলে জানা গেছে, মান্নাকে বগুড়া-২ আসনে, এস এম আকরাম নারায়ণগঞ্জ-৫, নাজিম উদ্দিন আহমেদ গাজীপুর-২, মোবারক হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন।

বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, দলের নীতিনির্ধারকেরা চান ড. কামাল হোসেন প্রার্থী হন। তিনি আগ্রহী হলে ঢাকা-১৬ (মিরপুরের পল্লবী) আসনে প্রার্থী করা হতে পারে। গণফোরামের মহাসচিব মোস্তফা মহসিন মন্টুকে ঢাকা-৭, সুব্রত চৌধুরীকে ঢাকা-১০ আসনে প্রার্থী করার কথা ভাবা হচ্ছে। জেএসডির সভাপতি আ স ম রব লক্ষ্মীপুর-৪ ও ঢাকা-১৮ (উত্তরা) আসনের যেকোনো একটি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি আবদুল কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮ আসনে প্রার্থী হতে পারেন।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০-দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দুটি জোট আছে। কারও সঙ্গেই এখনো আলোচনা শুরু হয়নি। সময় আছে অনেক। তবে এবার আমাদের বিজয়ী হতে হবে একটি ভীরু পরিবেশে। তাই জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা যাঁর বেশি, তাঁকেই আমরা মনোনয়ন দেওয়ার চেষ্টা করব।’