বিএনপির প্রার্থীদের যোগ্যতা 'টিকে থাকতে পারবেন তো?'

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার আজ রোববার সকালে শুরু হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সকাল নয়টার দিকে থেকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শুরু হয়। আজ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। পঞ্চগড়-১ আসনের প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম সাক্ষাৎকার দেন ওই আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ইউনুস আলী নামের এক নেতা।

সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জানিয়েছেন, কোন নেতার কী অবদান, বিগত ১২ বছর কে কী করছেন, সে খবর দলের কাছে আছে। এরপরই প্রার্থীর কাছে প্রশ্ন করা হচ্ছে, এই ১২ বছর প্রার্থী সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের দ্বারা কী ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন? তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের পাশে কীভাবে ছিলেন? এবং নিজে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন?

এরপর সাক্ষাৎকারের জানতে চাওয়া হচ্ছে, এলাকায় প্রার্থীর অবস্থান কতটা শক্তিশালী। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে ভোটের লড়াইয়ে থাকতে পারবে কি না?

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

যেসব প্রার্থীর কর্মকাণ্ড, নিজ নিজ আসনে অবস্থা ভালো এবং মনোনয়ন পাওয়ার সব যোগ্যতা আছে, তখন ওই প্রার্থীর কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবেন তো?

বিএনপির মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাৎকার দিয়েছেন—এমন কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মনোনয়নপ্রত্যাশী ওই নেতারা বলছেন, মূলত ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই কথাটি জানতে চাইছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিএনপির একজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলেও এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই নেতা বলেন, এবার ভিন্ন পরিস্থিতিতে বিএনপি নির্বাচন করছে। এ কারণে এটি নিশ্চিত হওয়া দরকার, ওই প্রার্থী আগেই মাঠ ছেড়ে দেবেন, নাকি শেষ পর্যন্ত বিরূপ পরিস্থিতে সরে দাঁড়াবেন, সেটা জানতে চাওয়া হচ্ছে। এবার প্রার্থীদের যোগ্যতার ক্ষেত্রে এটিও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রথম আলোকে বলেন, মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা বলছেন, সম্প্রতি একসঙ্গে বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই নির্বাচনের উদাহরণ টানা হয়েছে। তারেক রহমান ও বোর্ডের সদস্যরা তাঁর কাছে জানতে চেয়েছেন, ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত তিনি টিকে থাকতে পারবেন কি না। যুক্তি হিসেবে নেতারা বলছেন, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মধ্যে সিলেটে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক ও রাজশাহীর মেয়রপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত ছিলেন। এর মধ্যে আরিফুল হক জয় পেয়েছেন। আর বুলবুল একাই লড়াই করছেন। নেতারা বলছেন, বুলবুলের সঙ্গে স্থানীয় নেতারা মাঠে নামলে সেখানেও বিএনপি বিজয় পেতে পারত।

বিএনপির নেতারা বরিশালে দলটির মেয়রপ্রার্থী মুজিবর রহমান সরোয়ারের সরে দাঁড়ানোর দিকেও ইঙ্গিত করেছেন।

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ
গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রবেশ করছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। ছবি: শুভ্র কান্তি দাশ

মনোনয়নপ্রত্যাশী ওই নেতা বলেন, বোর্ড সদস্যরা বলছেন, ‘এবার একটা ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভোট হচ্ছে। এখানে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে টিকে থাকতে হবে। ভোটের মাঠে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। তাই আমার কাছে মনে হয়েছে, যাঁরা নিজ নিজ এলাকায় বিরূপ পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে ভোটের মাঠে থাকতে পারবেন, ভোটারদের সঙ্গে থাকতে পারবেন, তাঁদেরই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’ তিনি আরও বলে, প্রার্থীদের নার্ভ কতটা শক্ত, প্রার্থীর জন্য স্থানীয় নেতা-কর্মীরা কতটা ত্যাগ শিকার করতে পারবেন, সেটা দেখা হচ্ছে।

গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎকার বোর্ডে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আছেন। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত আছেন।

১২ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপ্রত্যাশীদের কাছে ফরম বিক্রি করে বিএনপি। গতকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রির হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে জানায় বিএনপি।

দলটি ৪ হাজার ৫৮০টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করেছে। তবে জমার হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি দলটি। সব ফরম জমা পড়লে এই খাতে বিএনপির আয় হবে ১৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। বিএনপির মনোনয়ন ফরমের দাম ছিল ৫ হাজার টাকা। অবশ্য ফরম জমা দেওয়ার সময় ২৫ হাজার টাকা করে জামানত নিয়েছে দলটি।