মনোনয়ন নিয়ে দুই দলে লড়াই

সাগুফতা ইয়াসমিন, মাহবুবে আলম, মিজানুর রহমান সিনহা, আবদুস সালাম
সাগুফতা ইয়াসমিন, মাহবুবে আলম, মিজানুর রহমান সিনহা, আবদুস সালাম

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়তে চান ১৩ জন। তবে মনোনয়নের লড়াইয়ে এগিয়ে আছেন বর্তমান সাংসদ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চারজন। তাঁদের মধ্যে শক্তিশালী অবস্থানে আছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম। দল দুটির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

লৌহজংয়ের ১০টি ও টঙ্গিবাড়ীর ১৩টি ইউনিয়ন নিয়ে মুন্সিগঞ্জ-২ আসন গঠিত। মোট ভোটার ৩ লাখ ৫ হাজার ৮২২।

১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সব নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি আওয়ামী লীগের হাতে চলে যায়। সে সময় জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। তিনি পেয়েছিলেন ১ লাখ ৭ হাজার ৪৫৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মিজানুর রহমান সিনহা পান ৯০ হাজার ৮৬ ভোট।

আওয়ামী লীগে মনোনয়নপ্রত্যাশী ১৩ জন
বর্তমান সাংসদ সাগুফতা ইয়াসমিন ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ছাড়া দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ লুৎফর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক সোহানা তাহমিনা, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ঢালী মোয়াজ্জেম হোসেন, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদ, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জগলুল হালদার, লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল রশিদ সিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমেদ মোড়ল, টঙ্গিবাড়ী আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম বাদল মল্লিক, লৌহজং উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রানু আক্তার, জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, শেখ রাসেল শিশু-কিশোর সংঘের মুন্সিগঞ্জ জেলা সভাপতি মো. শামীম হোসেন।

দলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, সাগুফতা ইয়াসমিন ১৯৯৬ সালে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ হয়ে এলাকায় রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন। তিনি দলের মনোনয়নের অন্যতম দাবিদার।

জানতে চাইলে সাগুফতা ইয়াসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আসন থেকে যতজন দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, তাঁদের সবার মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার আছে। তাঁরা মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্য। তবে জনমত জরিপ করলে আমি সবার থেকে এগিয়ে থাকব। তারপরও প্রধানমন্ত্রী যাঁকে এই আসনে নৌকা প্রতীক দেবেন, তাঁর পক্ষে কাজ করব।’

এদিকে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও মনোনয়নের লড়াইয়ে আছেন শক্ত অবস্থানে। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, তিনি চার বছর ধরে এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়েছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দান-অনুদান দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ তাঁর সঙ্গে মাঠে আছেন।

জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের অবহেলিত নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলাম। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছি। সংসদ নির্বাচন করতে পারি আর না পারি, সব নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ রাখব।’ তিনি আরও বলেন, ১০ বছর ধরে তিনি রাষ্ট্রকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা পরিচালনা করেছেন। রাষ্ট্রের অর্থনীতি ও স্বার্থরক্ষায় কাজ করেছেন। এসব দিক বিবেচনা করলে তিনি এগিয়ে থাকবেন। তবে মনোনয়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তই শিরোধার্য।

বিএনপি
এই আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চারজন। দলীয় সূত্র জানায়, মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে শক্তিশালী অবস্থানে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম। তাঁরা ছাড়াও সাবেক তথ্যমন্ত্রী এম শামসুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম বাবু, জেলা বিএনপির সহসভাপতি আলী আজগর রিপন মল্লিক ও দলের নেতা মো. মহসিন এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী।

জানতে চাইলে মিজানুর রহমান সিনহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন, দল যদি মনে করে আমি তাঁদের থেকে কম যোগ্যতাসম্পন্ন, তাহলে আমি নির্বাচন করব না।’

অন্যদিকে আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিএনপির যাঁরা এখানে মনোনয়ন চেয়েছেন, আমি তাঁদের সবার চেয়ে রাজনৈতিকভাবে বয়োজ্যেষ্ঠ। বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থেকেছি। হামলা-মামলার শিকার হয়েছি। তৃণমূলের কাছেও আমার গ্রহণযোগ্যতা আছে। এসব দিক বিবেচনা করলে আমি মনোনয়নের এক নম্বর দাবিদার। এরপরও দল থেকে যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হবে, গণতন্ত্র উদ্ধারে তাঁর পক্ষ হয়ে কাজ করব।’