কারাগার থেকে নির্বাচনে

একাদশ সংসদ নির্বাচনে লড়তে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক বিভিন্ন মামলার নয়জন আসামি। তাঁরা সবাই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা। জামায়াতের দুজন স্বতন্ত্র এবং অন্যরা বিএনপি থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

নাশকতা, চেক প্রত্যাখ্যান ও ব্যাংকের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা অর্ধশত মামলায় দুই বছর ধরে কারাগারে আছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী। নির্বাচনে লড়তে চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপি থেকে তিনি মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগের প্রয়াত এ বি এম আবুল কাশেম মাস্টারের কাছে হেরে যান।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, তাঁদের জনপ্রিয় নেতাদের মিথ্যা মামলায় কারাগারে রেখে আসনগুলো বাগিয়ে নিতে চায় সরকারি দল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জনগণের রায় বিএনপির পক্ষেই আসবে বলে তাঁরা আশাবাদী। তবে পুলিশ বলছে, মামলার আসামি হওয়ায় তাঁরা কারাগারে আছেন।

চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালি আসন থেকে লড়তে গতকাল রোববার মনোনয়নপত্র নিয়েছেন মহানগর বিএনপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন। ৭ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে নাশকতার ৫০টি মামলা রয়েছে। তবে একটি মামলারও সাজা হয়নি। শাহাদাতের ব্যক্তিগত সহকারী মারুফুল হক বলেন, কারাগারে থাকায় তাঁর পক্ষে মনোনয়ন ফরম নেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী পত্রে সই করার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে জেল সুপারের কাছে আজ আবেদন করা হবে।

কোতোয়ালি আসন থেকে প্রার্থী হতে ফরম নিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম। গত ২২ অক্টোবর থেকে তিনি কারাগারে। তাঁর বিরুদ্ধে ভাঙচুর, বিস্ফোরক ও নাশকতার ৪০টি মামলা রয়েছে।

দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য লেয়াকত আলী চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। গত ৩০ অক্টোবর তিনি গ্রেপ্তার হন। তাঁর বিরুদ্ধে ২৪টি মামলা রয়েছে। বাঁশখালী থানা বিএনপির একাংশের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল প্রথম আলোকে বলেন, লেয়াকতের মনোনয়নপত্র নির্বাচন কার্যালয়ে জমা দেওয়া হবে।

রাঙ্গুনিয়া থানা বিএনপির একাংশের সভাপতি কুতুব উদ্দিন চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে লড়তে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। গত সেপ্টেম্বর থেকে তিনি কারাগারে। চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনে লড়তে চান জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি গত অক্টোবর থেকে কারাগারে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক বেলায়েত হোসেন চট্টগ্রাম-২ (সন্দ্বীপ) থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।

কারাবন্দী বিএনপির নেতাদের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী নগর বিএনপির সহসভাপতি আবদুস সাত্তার প্রথম আলোকে বলেন, কারাবন্দী বিএনপির সাত নেতার বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও কেউ সাজাপ্রাপ্ত নন। তাঁদের নির্বাচনে লড়তে কোনো সমস্যা নেই। তাঁদের পক্ষে দলের মনোনয়ন ফরম নেওয়া হয়েছে।

আবদুস সাত্তার আরও বলেন, আসলাম চৌধুরী, শাহাদাতসহ বিএনপির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে সরকার ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে কারাগারে আটক রেখেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণের রায় বিএনপিই পাবে। কারাগারে আটক রেখে কাউকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যাবে না।

জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলাম চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য শাহজাহান চৌধুরী একই আসন থেকে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। দুজনই কারাবন্দী। তাঁদের পক্ষে স্বজনেরা চট্টগ্রাম-১৫ সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে মনোনয়ন ফরম নেন। শাহজাহান ওই আসনে ’৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়ী হন। ২০০৮ সালে মনোনয়ন দেওয়া হয় শামসুলকে। তিনিও জয়ী হন। তখন থেকেই দুই নেতার মধে৵ বিরোধ শুরু হয়। বর্তমানে কারাগারে দুজনই পাশাপাশি কক্ষে থাকলেও কেউ কারও মুখ দেখেন না বলে কারা সূত্রে জানা গেছে।

প্রসঙ্গত, নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াত এবার দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারবে না। তাই জামায়াতের নেতারা স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।