চট্টগ্রামে ঋণের জালে বড় নেতারা

গিয়াস কাদের চৌধুরী ও আসলাম চৌধুরী
গিয়াস কাদের চৌধুরী ও আসলাম চৌধুরী

চট্টগ্রাম বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আসলাম চৌধুরী ঋণখেলাপি হওয়ার আশঙ্কায় মাঝারি ও ছোট নেতাদের চোখ এখন ফটিকছড়ি ও সীতাকুণ্ড আসনের দিকে। তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা এসব আসনে বিএনপির ফরম কিনেছেন।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি), চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) ও চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনের জন্য দলীয় ফরম কিনেছেন। তাঁর ছেলে সামির কাদের চৌধুরী কিনেছেন চট্টগ্রাম-২ আসনের ফরম। একইভাবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী কিনেছেন চট্টগ্রাম-৪ আসনের ফরম।

দলীয় সূত্র আরও জানায়, স্থানীয় রাজনীতিতে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আসলাম চৌধুরীর ব্যাপক প্রভাব আছে। এমনকি কেন্দ্রের রাজনীতিতেও তাঁরা দুজন আলোচিত ব্যক্তি। দুজনই ব্যবসায়িক কারণে ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। বছর তিনেক আগে পুঁজি–সংকটের কারণে ঢাকা ডায়িং নামে গিয়াসউদ্দিনের শিল্পকারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিহিংসার শিকার গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী ও আসলাম চৌধুরী। ফলে ১০ বছর ধরে স্বাভাবিক ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেননি বলে দুজনই ব্যাংকঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছেন। ঋণখেলাপির তালিকায় তাঁদের নাম উঠতে পারে বলে দলীয় নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা। তাই এ চারটি আসনে বিএনপির ছোট ও মাঝারি নেতারা দলীয় ফরম কিনেছেন।

চট্টগ্রাম-৪ আসনে ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আসলাম চৌধুরী। তখন তিনি আওয়ামী লীগের প্রয়াত আবুল কাশেমের কাছে হেরে যান। আসন্ন নির্বাচনেও তাঁকে বিএনপির শক্তিশালী প্রার্থী বলে মনে করেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। কিন্তু ঋণখেলাপি হওয়ার আশঙ্কায় এ আসনে বিএনপির আরও সাতজন ফরম কিনেছেন। তাঁদের মধ্যে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী ছাড়াও চট্টগ্রাম নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন ও নগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আহমেদুল আলম চৌধুরী রয়েছেন।

বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, কোনো কারণে বাছাইয়ে আসলাম চৌধুরী বাদ পড়ে গেলে মোশাররফ হোসেন ও আহমেদুল আলম চৌধুরী মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালাবেন। এই দুই তরুণ নেতা নগর ছাত্রদলের একই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আহমেদুল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো কারণে আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হলে বিকল্প শক্তিশালী প্রার্থী থাকা উচিত। এ জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছি।’

চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী ও তাঁর ছেলে সামির চৌধুরী বিএনপির ফরম কিনেছেন। গিয়াসউদ্দিন কাদেরও ঋণের জালে আটকা পড়তে পারেন বলে নেতা-কর্মীদের আশঙ্কা। ২০০৮ সালে এ আসনে গিয়াসউদ্দিনের বড় ভাই সালহউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী জয়ী হন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।

গিয়াসউদ্দিন ঋণের জালে আটকে যেতে পারেন বলে তাঁর ছেলে সামির চৌধুরী ফটিকছড়ি আসনে বিএনপির ফরম কেনেন। কিন্তু সামির চৌধুরীর বিরুদ্ধে একটি চেকের মামলায় ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৪০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। মামলাটি করেছিল চট্টগ্রামের বায়েজিদ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ।

ফটিকছড়ি আসনে বিএনপির ফরম কিনেছেন ১৩ জন। অনেকে দলীয় রাজনীতিতে পরিচিত নন। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য গোলাম আকবর খোন্দকার, সাবেক বিচারপতি ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফয়সল মাহমুদ ফয়জী।

যোগাযোগ করা হলে ফয়সল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ফটিকছড়ির মানুষের জন্য কোনো কল্যাণকর কাজ গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী করেননি। রাউজানে আওয়ামী লীগের ফজলে করিম চৌধুরীর জনবল দেখে তিনি হয়তো ফটিকছড়ির দিকে আসতে চাইছেন। এক প্রশ্নের জবাবে ফয়জী বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে গিয়াসউদ্দিন কাদেরের একটি শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বলে আমি শুনেছি। তবে তিনি ঋণখেলাপি কি না, তা বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো বলতে পারবে।’

ঋণ বা বিলখেলাপিরা সংসদ নির্বাচন করতে পারেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি ফয়জী বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব বিধিমালা অনুযায়ী এসব ব্যক্তি নির্বাচনে অযোগ্য।

এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করেও গিয়াসউদ্দিন চৌধুরীর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।