হত্যার হুমকিতে এলাকায় যেতে পারছেন না স্বপন

>

গৌরনদী পৌরসভার মেয়র হারিছুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ। হারিছুরের অস্বীকার।

জহির উদ্দিন স্বপন
জহির উদ্দিন স্বপন

বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপন অভিযোগ করেছেন, তিনি নির্বাচনী প্রচারণার জন্য এলাকায় যেতে পারছেন না। গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান প্রকাশ্যে তাঁকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। এই অবস্থায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ‘হারিছুর বাহিনীর সন্ত্রাস’ বন্ধে নির্বাচন কমিশনের প্রতি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে হারিছুর রহমান বলেন, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বিরোধী পক্ষের নেতা–কর্মীরাই স্বপনকে হুমকি দিচ্ছেন।

এবারের নির্বাচনে বরিশাল–১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। বিএনপি থেকে মনোনয়ন চেয়েছেন চারজন। তাঁরা হলেন সাবেক সাংসদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সোবাহান, কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গাজী কামরুল ইসলাম।

জহির উদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মো. হারিছুর রহমান বিভিন্ন সভা–সমাবেশে প্রকাশ্যে আমাকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। আমি গৌরনদীতে গেলে আমাকে এবং দলের নেতা–কর্মীদের নিধন করার ঘোষণা দিচ্ছেন। হারিছ উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দলীয় নেতা–কর্মীদের লেলিয়ে দিচ্ছেন।’ স্বপন দাবি করেন, তাঁকে হুমকি দেওয়া–সংক্রান্ত হারিছুরের একাধিক ভিডিও তাঁর কাছে রয়েছে।

এ ধরনের একটি ভিডিওতে এক সভায় মেয়র হারিছুর রহমানকে বলতে শোনা যায়, ‘স্বপন সম্পর্কে বলতে চাই, তিনি যদি এলাকায় আসার চেষ্টা করেন তাহলে নেতা–কর্মীরা তাঁকে ধাওয়া করে পালিয়ে যেতে বাধ্য করবে।’

তবে পৌর মেয়র হারিছুর রহমান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের একজন প্রার্থী। তিনি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। জহির উদ্দিন স্বপন নিজেকে লাইমলাইটে আনতে এসব অভিযোগ করছেন। আওয়ামী লীগ এখানে সুসংগঠিত। কিন্তু বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী চার–পাঁচজন। নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণেই বিএনপির বিরোধী পক্ষের নেতা–কর্মীরা তাঁকে (স্বপন) হুমকি দিচ্ছেন, বিরোধীপক্ষের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন।’

অন্যদের অভিযোগ

স্থানীয় বিএনপির অন্তত ১০ জন নেতা অভিযোগ করেছেন, তফসিল ঘোষণার পর গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় হামলায় বিএনপির শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।

গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া থানা সূত্র বলেছে, চলতি মাসে গৌরনদীতে আওয়ামী লীগের ৫ নেতা বিএনপির ৪০৬ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখ করে এবং আগৈলঝাড়ায় যুবলীগের ২ নেতা বিএনপির ৮৭ জনের নাম উল্লেখসহ সহস্রাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ৭টি মামলা করেছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুস সোবাহান অভিযোগ করেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মিছিল–সমাবেশ ও মহড়া করছে, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। কেউ এলাকায় থাকতে পারছে না। আমাকে নির্বাচনী মাঠে না থাকতে হুমকি দিচ্ছে।’ একই অভিযোগ করেন দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমানও। তিনি বলেন, এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের আচরণ রহস্যজনক।

তবে গৌরনদী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জোবায়েরুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য করেছে। তারা এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।’

গৌরনদী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আনিসুর রহমান ফকির বলেন, বিএনপির দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালাচ্ছে।