সাংসদের বিদ্যুৎকেন্দ্র বাড়তি অর্থ নিচ্ছে

সাংসদ আসলামুল হকের একটি ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বেশি নিয়েছে ১১ কোটি টাকা। ৭ বছরেও শেষ হয়নি দুটির নির্মাণকাজ।

>
  • বছিলায় ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ারের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১১ সালে, ৭ বছরে অগ্রগতি ৫ শতাংশ।
  • গাবতলীতে ১০৮ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ঢাকা নর্থ ইউটিলিটির সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১২ সালে, এখানেও অগ্রগতি ৫ শতাংশ।  

 সরকারি দলের সাংসদ আসলামুল হকের সিএলসি নামের রেন্টাল বা ভাড়াভিত্তিক একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র অবৈধভাবে অর্থ নিচ্ছে সরকারের কাছ থেকে। সরকারদলীয় এ সাংসদের বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়মের বাইরে গত এক বছরে নিয়ে গেছে ১১ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ ছাড়া ১০৮ মেগাওয়াটের দুটি ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্ল্যান্ট (আইপিপি) সাত বছর আগে অনুমতি পেলেও এখনো পর্যন্ত নির্মাণ করতে পারেনি আসলামের প্রতিষ্ঠান। এতে কেন্দ্র বাতিলের বিধান থাকলেও তা করেনি পিডিবি। এমনকি নির্ধারিত সময়ে কেন্দ্র নির্মাণ করতে না পারলে জরিমানার যে বিধান রয়েছে, তা–ও এমপি আসলামের ক্ষেত্রে হয়নি।

এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার মুঠোফোনে আসলামুল হকের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন বারবার সময় বাড়িয়েছি ও বেশি টাকা নিচ্ছি, তা বিদ্যুৎ বিভাগই ভালো বলতে পারবে। এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’

১১ কোটি টাকা বেশি বিল

কেরানীগঞ্জের বছিলায় সিএলসি পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড নামে ফার্নেস তেলভিত্তিক ১০৮ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হয় গত বছরের জানুয়ারি থেকে। নিয়ম অনুযায়ী, বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের আগে কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। গত ৯ মার্চ পিডিবির সচিব মিনা মাসুদ উজ্জামান সিএলসির কেন্দ্রটির ক্ষমতা ১০৮ মেগাওয়াট ঘোষণা করে চিঠি দেন। অথচ ১০৮ মেগাওয়াট ক্ষমতায় কেন্দ্রটি কখনোই চালু করা যায়নি।

পিডিবি সূত্র জানায়, গত বছরের গোটা জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রটির সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ২ জানুয়ারিতে, ৮১ দশমিক ৭২ মেগাওয়াট। আর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়ে এ কেন্দ্রটি সর্বোচ্চ উৎপাদন করতে পেরেছে ৯৮ দশমিক ১৮ মেগাওয়াট। এ হিসাবে কেন্দ্রের ভাড়া বা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু কেন্দ্রটি নিয়েছে ৯১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ বাড়তি নিয়েছে ১১ কোটি টাকা।  

প্রসঙ্গত, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে সরকার তেল বা গ্যাস সরবরাহ করে বিনা অর্থে, এ ছাড়া যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ও বিদ্যুতের দাম দেওয়া ছাড়াও কেন্দ্রের জন্য আলাদা করে ভাড়া বাবদ যে অর্থ দেওয়া হয়, তা ক্যাপাসিটি পেমেন্ট নামে পরিচিত। ইউনিটপ্রতি এ ভাড়া একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে।

সিএলসির বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকৃত ক্ষমতা বেশি দেখানোর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পিডিবির সচিব মিনা মাসুদ উজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি পিডিবির কারিগরি একটি টিম আছে, তারা দেখে। আমি তাদের প্রতিবেদন দেখে ১০৮ মেগাওয়াট ক্ষমতা তখন ঘোষণা করেছিলাম। কারিগরি এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না, এটা কেন এমন হলো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎসচিব আহমদ কায়কাউস প্রথম আলোকে বলেন, এটা জানা নেই। অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাত বছরেও আসেনি দুই কেন্দ্র

কেরানীগঞ্জের বছিলায় ১০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে ২০১১ সালের ১২ অক্টোবর চুক্তি সই করে পিডিবি। এক বছরের মধ্যে কেন্দ্রটি নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও গত ৭ বছরে অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। রাজধানীর গাবতলীতে ১০৮ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ঢাকা নর্থ ইউটিলিটির সঙ্গে চুক্তি হয় ১২ অক্টোবর ২০১২ সালে। এ কেন্দ্রের অগ্রগতিও মাত্র ৫ শতাংশ।  

সাংসদ মো. আসলামুল হক মাইশা গ্রুপের চেয়ারম্যান। আর বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা নর্থ ইউটিলিটি ও ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার মাইশা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ বিলম্বের কারণে পিডিবির একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে কেন্দ্র দুটির নির্মাণ অনুমতি বাতিলের পক্ষে মত দেওয়া হলেও বাস্তবে প্রকল্প দুটি বাতিল হচ্ছে না।

সরকারি দলের সাংসদ হওয়ার কারণেই কি আসলামুল হক এসব সুবিধা পাচ্ছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎসচিব আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘বেসরকারি খাতে যখন আইপিপি কেন্দ্র হচ্ছিল, তখন এ দুটি প্রকল্প এগিয়ে এসেছিল। যেহেতু সে সময় অল্পসংখ্যক উদ্যোক্তা সরকারের আহ্বানে এগিয়ে এসেছিল, সে কারণে বিষয়টি আমরা সহনীয়ভাবে দেখেছি। তবে এখন আর সময় বাড়ানো হবে না। যারা ব্যর্থ হবে তাদের অনুমতি বাতিল হবে।’