গোপন বৈঠকের অভিযোগ ভিত্তিহীন: সাজ্জাদুল হাসান

সাজ্জাদুল হাসান
সাজ্জাদুল হাসান

রাজধানীর বেইলি রোডের অফিসার্স ক্লাবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের কিছু দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘গোপন ষড়যন্ত্রমূলক’ বৈঠক করার যে অভিযোগ বিএনপি করেছে তাকে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান। আজ রোববার প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এমন কোনো বৈঠকের কথা তিনি জানেন না। এ ধরনের বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তিনি।

শনিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, ২০ নভেম্বর রাত সাড়ে সাতটা থেকে আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠকে সারা দেশের ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং সেটআপ ও প্ল্যান রিভিউ’ করা হয়। তাঁর দাবি, বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সচিবসহ কয়েকজন সচিব এবং র‍্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপির এই অভিযোগ নিয়ে প্রথম আলো চারজন সচিবসহ পাঁচ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাঁরা প্রত্যেকেই এ রকম কোনো বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা উড়িয়ে দেন।

বিএনপির অভিযোগ অনুযায়ী, ২০ নভেম্বর রাতে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের চারতলার পেছনের কনফারেন্স রুমে গোপন বৈঠকে জনপ্রশাসনসচিব ফয়েজ আহমদ, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ার, বেসামরিক বিমান পরিবহনসচিব মহিবুল হক, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার আলী আজম, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ কাজী নিশাত রসুল উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসান বলেন, এ ধরনের বানোয়াট ও ঢালাও অভিযোগ প্রকাশ হওয়ায় তিনি বিস্মিত। গণমাধ্যম তাঁর বক্তব্য ছাড়া এমন কল্পিত অভিযোগ প্রকাশ করতে পারে কি না, সেই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

অভিযোগের বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনসচিব মো. মহিবুল হক শনিবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অফিসার্স ক্লাবে অফিসাররাই তো যাবেন। আগেও গেছেন, ভবিষ্যতেও যাবেন। এটাকে ভিন্ন খাতে নেওয়া দুঃখজনক। আজ রোববার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের পাঠানো এক প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, মহিবুল হক ওইদিন (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত হোটেল প্যান-প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে পূর্ব‌র্নির্ধারিত বার্ষিক সাধারণ সভা ও পরিচালনা পর্ষদের সভায় ছিলেন।

২০ নভেম্বরের বৈঠকের বিষয়ে বিএনপির অভিযোগ সম্পর্কে পানিসম্পদসচিব কবির বিন আনোয়ার শনিবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অফিসার্স ক্লাবের আইডিয়াটাই তাদের (বিএনপি) কাছে পরিষ্কার নয়। তিনি বলেন, অফিসার্স ক্লাব একটি প্রকাশ্য স্থান, এখানে সরকারি কর্মকর্তারা চা খান, আড্ডা দেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে এসব কথা বলা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-১ কাজী নিশাত রসুল বলেন, বাবার নাম উল্লেখ করে তাঁকে যেভাবে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে তিনি বিব্রত ও বিস্মিত। তিনি বলেন, এমন কোনও বৈঠকের কথা তিনি শোনেননি, জানেন না এবং যোগ দেওয়া তো অনেক দূরের কথা।

এদিকে নির্বাচন নিয়ে অফিসার্স ক্লাবের বৈঠকে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে শনিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা একটা অভিযোগ আনা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সচিব প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বাইরে ইসি সচিবের কোনো সত্তা নেই।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এমন মিথ্যাচার নিন্দনীয় ও দুঃখজনক।