মাঠে থাকে লাল লতিকা হট্টিটি

লাল লতিকা হট্টিটি। সম্প্রতি গাজীপুরে।  ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমান
লাল লতিকা হট্টিটি। সম্প্রতি গাজীপুরে। ছবি: আ ন ম আমিনুর রহমান

সার্বক্ষণিক টেনশনে ভোগা ও চিৎকার-চেঁচামেচিতে চ্যাম্পিয়ন এই পাখিদের মতো পাখি বাংলাদেশে ‘নীলকণ্ঠ’ ছাড়া আর নেই। এই দুটি পাখিই খোলা মাঠের পাখি। নীলকণ্ঠ বাসা করে গাছের খোঁড়লে-কোটরে। এই পাখিরা বাসা করে খোলা মাঠের মাটির ওপরে বা নিরিবিলি দালানের ছাদের ওপরে। এদের বাসা বানানোর উপকরণ মূলত ছোট ছোট ঢিল, নুড়িপাথর, মরা শামুকের খোল, ইটের খোয়া ইত্যাদি। এগুলো দিয়ে বৃত্ত তৈরি করে। গ্রীষ্ম-শরতে বাসায় কালো ছিট-ছোপওয়ালা ধূসর-ছাই রঙের ডিম পাড়ে চারটি। স্বামী–স্ত্রী দুজনেই পালা করে তা দিয়ে ডিম ফোটায় ২৩-২৪ দিনে। ডিমের মতো ছানাদের রং–ও হয় ক্যামোফ্লেজ। ডিমে তা দিতে বসার আগে এরা লম্বা দুপায়ে দাঁড়িয়ে শরীরে ঝাঁকুনি তুলে বুক-পেটের পালকে গ্যাপ তৈরি করে নেয়।

পাখিটির নাম ‘লাল লতিকা হট্টিটি’। ইংরেজি নাম রেড–ওয়াটলেড ল্যাপিং। বৈজ্ঞানিক নাম vanellus indicus। দৈর্ঘ্য ৩৩ সেন্টিমিটার। হলুদ লম্বা পা ও পায়ের আঙুলের এই পাখিদের ঠোঁটটি আলতা লাল, আগাটা কালো। বুক-গলা-পেট-ঘাড়-মাথা ও ওড়ার পালকের অগ্রভাগটা কালো, পিঠ অস্পষ্ট ছাপসহ বাদামি, ঘাড়-বুক-পেট ও লেজের তলাটা সাদা। ঠোঁটের লাল টকটকে লতিকা দুচোখের লাল রঙের মোটা বৃত্তের সঙ্গে মিলে একটা সুদৃশ্য রোদচশমা চোখে পরার মতো লাগে। লাল রঙের ফ্রেমে যেন কালো কাচ বসানো। চোখের মণি কালো, তাই এমন দেখায়।

মূল খাদ্য পোকামাকড়, পিঁপড়া, উইপোকা, কেঁচোসহ মাঠের কচি ঘাসের ডগা-পাতা। রাত, এমনকি চাঁদনি রাতেও এরা হেঁটে হেঁটে খাবার খেতে পারে। গ্রামবাংলার মানুষ আজও মধ্যরাতে ঘরে শুয়ে ওদের জোরালো কণ্ঠের ‘সাইরেন’ ‘হট্টিটি হট্টিটি’, ‘হট হট—হটে যা’ ধরনের ডাক শুনতে পায়। হয়তোবা বাসার পাশে এসেছে শিয়াল, খাটাশ, বনবিড়াল বা বিষধর সাপ!

এরা আকাশে উড়ে উড়ে সংকেত দিয়ে ছোট ছানাদের যেমন পরিচালিত করতে পারে, তেমনি কুকুর-বেজি বা অন্য প্রাণী বাসার সীমানায় গেলে চেঁচিয়ে মাঠ ফাটাতে ফাটাতে দর্শনীয় ডাইভ দিয়ে শত্রুকে ভড়কে দিতে পারে। সারা বাংলাদেশে বারো মাসই খোলা মাঠে–ময়দানে এই পাখিদের দেখা মেলে। এরা জোড়ায় চলে।