জাবিতে ছিনতাই-লাঞ্ছনা: ৩ ছাত্র আজীবন, দুজন ২ বছর মেয়াদে বহিষ্কৃত

মুস্তাফিজুর রহমান, ইয়া রাফিউ শিকদার ও সোহেল রানা। এই তিন শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে জাবি প্রশাসন।
মুস্তাফিজুর রহমান, ইয়া রাফিউ শিকদার ও সোহেল রানা। এই তিন শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে জাবি প্রশাসন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ছিনতাই, মারধর ও ছাত্রী লাঞ্ছনার অভিযোগে ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে আজীবন ও দুই কর্মীকে দুই বছর মেয়াদে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল সোমবার রাতে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেটের সদস্যসচিব রহিমা কানিজ।

আজীবন বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের ইয়া রাফিউ শিকদার, মুস্তাফিজুর রহমান ও সোহেল রানা। একই অভিযোগে বাংলা বিভাগের আসিফ আহমেদ ও সজিব কাজীকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত ছাত্ররা সবাই প্রথম বর্ষের (৪৭ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী। তাঁরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানার অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।

ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, গত রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় সন্ধ্যাকালীন কোর্সের এক শিক্ষার্থী ও তাঁর বান্ধবীকে আটকে বোটানিক্যাল গার্ডেনের ভেতরে নিয়ে যান বহিষ্কৃত ছাত্ররা। সন্ধ্যাকালীন কোর্সের ওই শিক্ষার্থীর কাছে ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন তাঁরা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ওই শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটানো হয়। এরপর তাঁর বান্ধবীকে ‘ধর্ষণ’ করার হুমকি দিয়ে তাঁর কানের দুল ছিনিয়ে নেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বহিষ্কৃতরা তাঁদের কর্মী নয় বলে দাবি করা হয়েছে। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ছিনতাই করার সময় তাঁদের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। তাঁর দাবি, বহিষ্কৃতরা নিজেদের বাঁচানোর জন্য ছাত্রলীগের পরিচয় দিয়েছেন।

তবে ছাত্রলীগসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সূত্র জানায়, শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে বহিষ্কৃতদের অংশগ্রহণ দেখা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, এর আগের ছিনতাইয়ের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের চাপের মুখেই সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ইয়া রাফিউ শিকদার, মুস্তাফিজুর রহমান ও সোহেল রানার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিংপুল এলাকায় একটি দৈনিক পত্রিকার আলোকচিত্রীকে ছিনতাই ও মারধরের অভিযোগ ওঠে। সেসময় ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় চ্যানেল আই অনলাইনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাহমুদুল হককে মারধর ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করা হয়। সেই দিনই ওই ঘটনার বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন মাহমুদুল হক ও ওই ছাত্রী। পরে এই তিনজনসহ শাখা ছাত্রলীগের চার কর্মীকে বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সাংবাদিকদের অভিযোগ, ছাত্রলীগের চাপের মুখে দুই দিনের মাথায় সেই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।