ড. কামালরা সাজাপ্রাপ্তদের নেতৃত্বে গেলেন: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন এবং সুশীল সমাজের কিছু সদস্যের বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে হাত মেলানোর কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নেতৃত্বের অধীনে চলে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বিকেলে সশস্ত্র বাহিনীর দেড় শতাধিক সাবেক কর্মকর্তার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ড. কামাল হোসেন সাহেবসহ যে সুশীল বাবুরা এক জায়গায় হয়ে গেছেন, সবাই অনেক নীতির কথা বলেন, তাঁদের সেই নীতি কোথায় গেল? কার অধীনে আজকে তাঁরা মনোনয়ন নিচ্ছেন। যাঁরা একসময় আইনকেই মানেনি, তাঁদের কাছ থেকে মনোনয়ন নিয়ে তাঁরা নাকি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। তাঁরা জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাস দূর করবেন এবং দেশকে নাকি উন্নত করে দেবেন।’

এর আগে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এর মধ্যে ১০৯ জন সেনাবাহিনীর, ১৯ জন নৌবাহিনী এবং ১৮ জন বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা আমাকে দুর্নীতিবাজ বলে বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁরা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, আজকে সব ভিড়েছে গিয়ে কোথায়? গণতন্ত্র রক্ষা করতে, গণতন্ত্রের অভাব কোথায়?’ এই বিএনপির আমলেই দেশ পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। যে দলের গঠনতন্ত্রের ৭ ধারায় আছে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে তারা দলের সদস্যও হতে পারবে না। কাজেই যারা দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের জন্য সাজাপ্রাপ্ত, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় সাজাপ্রাপ্ত, সেই সাজাপ্রাপ্ত মানুষের নেতৃত্বে চলে গেছেন আমাদের এই সুশীল বাবুরা গণতন্ত্র উদ্ধার করতে, এটা বাংলাদেশের এক দুর্ভাগ্য। তিনি এ সময় গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী প্রশ্ন তুলে বলেন, তাঁরা কোনো গণতন্ত্র দিতে চান, তাঁর সংজ্ঞাটি কী? এটা নিশ্চয় জনগণের গণতন্ত্র নয়।’

খালেদা জিয়ার এতিমের অর্থ আত্মসাতের মামলা তাঁর সরকার করেনি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে খালেদার নিযুক্ত সেনাপ্রধান মইনউদ্দিন, সাবেক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফখরুদ্দীনরা মামলা দিয়েছিল এবং ১০ বছর আদালতে মামলা চললেও খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা তাঁকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলেও স্মরণ করিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাঁর সরকার কোনো রাজনৈতিক মামলা করেনি। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে এনার্জি লস করার চেয়ে তিনি বরং দেশের উন্নয়নে নজর দিয়েছিলেন।

কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা কথা বলতে চেয়েছিল এবং তারা যতবার চেয়েছে, আমরা সংলাপ করেছি। আমরা নির্বাচনের একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির জন্যই তা করেছি।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ষড়যন্ত্রকারীদের বিষয়ে সব সময় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে সব সময় যারা ষড়যন্ত্র করে, তাদের সম্পর্কে আপনাদের সদা সতর্ক থাকতে হবে।’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং বি এম মোজাম্মেল হক মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সাবেক প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল ওয়াদুদ, রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) হারুনুর রশীদ, এয়ার কমোডর (অব.) কাজী দেলোয়ার হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ডা. কানিজ ফাতেমা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।