বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে তাবলিগের দুই পক্ষ মুখোমুখি

টঙ্গীর তুরাগ নদের পাড়ে বিশ্ব ইজতেমা মাঠের সব কটি ফটকে কড়া পাহারা বসিয়েছে তাবলিগ জামাতের এক পক্ষ। সেখানে কে আসছেন, কেন আসছেন, কোথায় যাবেন—খুঁটিনাটি নানা বিষয় তদারক করছেন তাঁরা। কারও কথায় অমিল পেলে ফিরিয়ে দিচ্ছেন গেট থেকে।

প্রতিবছর তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় সম্মিলন বিশ্ব ইজতেমা এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় এক মাস ধরে এখানে মাদ্রাসাছাত্ররা যেভাবে পাহারা দিচ্ছে, তার গতি–প্রকৃতি অন্য রকম বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

তাবলিগ–সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ দিনের জোড় (সম্মিলন) এবং ১১-১৩ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত তিন দিনের ইজতেমা করার ঘোষণা দিয়েছেন ভারতের তাবলিগ জামাতের মুরব্বি সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা। অপরদিকে তাবলিগের দেওবন্দপন্থীরা ডিসেম্বরের ৭ থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত জোড় এবং আগামী বছরের জানুয়ারির ১৮ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত তিন দিন ইজতেমার ঘোষণা দিয়েছেন। দুই পক্ষের বিবদমান বিরোধের জেরে দেওবন্দপন্থীরা মাঠ দখল করে সতর্ক পাহার ব্যবস্থা করেছেন বলে তাবলিগ জামাত সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে তাবলিগের মাঠ দখলমুক্ত করার দাবিতে গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সাদপন্থীরা। সেখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আইনজীবী মো. ইউনুস মোল্লা। উপস্থিত ছিলেন মেজর জেনারেল মো. রফিকুল ইসলাম, মুফতি আনোয়ার আবদুল্লাহ, মো. সাইফুল্লাহ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, তাবলিগের অপর পক্ষটি উগ্রপন্থায় বিশ্বাসী। তারা কোমলমতি মাদ্রাসাছাত্রদের হাতে লাঠিসোঁটা দিয়ে ইজতেমা মাঠ পাহারায় বসিয়ে দিয়েছে। এর আগেও মাদ্রাসার এসব শিশুকে মারকাজ মসজিদে হামলা, দখল, হাঙ্গামাসহ বিভিন্ন অপকর্মে ব্যবহার করা হয়েছে। এ অবস্থায় তাঁরা (সাদপন্থী) যেন ৩০ ডিসেম্বর শুরু হওয়া পাঁচ দিনের জোড় ও ১১ জানুয়ারি থেকে তিন দিনের ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে করতে পারেন, সে জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে ইজতেমা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, চলাচলের জন্য চারটি ফটক সচল রাখা আছে। প্রতিটি ফটকে পাহারা রয়েছে। কেউ লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছেন, আবার কেউ গেটের পাশে চেয়ারে বসে লোকজনের দিকে খেয়াল রাখছেন। ভেতরে ঢুকতে চাইলে পরিচয় ও বিস্তারিত জানতে চান তাঁরা। টঙ্গী বাটা গেটে ছিলেন ডেমরা এলাকার তাবলিগ জামাতের আমির মো.আবদুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমা সর্বস্তরের মানুষের জন্য। প্রতিবছর এখানে হাজার মানুষের ঢল নামে। কিন্তু একটি চক্র এই ইজতেমা নষ্ট করার জন্য নানা ধরনে চক্রান্ত করছে। আমরা যেকোনো মূল্যে তা প্রতিহত করব।’ এ জন্যই গেটে পাহারা বসানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাহারা সব সময় থাকে। এখন হয়তো জোরদার করা হয়েছে।’

ইজতেমা মাঠের ভেতরে কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি ও হকার জানান, গত কয় দিনে বিভিন্ন জায়গা থেকে তাবলিগের লোকজন ভেতরে ঢুকতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

নাম না প্রকাশের শর্তে একজন মুরব্বি বলেন, সাদপন্থীরা যাতে এখানে ইজতেমা করতে না পারে, সে জন্য সবাই পাহারা দিচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সাদ কান্ধলভীর কোনো অনুসারীকে এ মাঠে ঢুকতে দেওয়া হবে না। তবে তাঁরা নিজেদের ভুল স্বীকার করে আসলে আবার ঢুকতে পারবে।’

এ ব্যাপারে জানতে পুরো মাঠের দায়িত্বে থাকা আমির মো. ইখলাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কোন ইতাত পার্টির (সাদ অনুসারী) লোক এখানে আসতে পারবে না। ঈমান থাকতে হবে।’