মনোনয়নপত্র জমাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ১০

মুন্সিগঞ্জে সংঘর্ষের সময় লাঠিসোঁটা নিয়ে মারমুখী একপক্ষ। ২৮ নভেম্বর। ছবি: ফয়সাল হোসেন
মুন্সিগঞ্জে সংঘর্ষের সময় লাঠিসোঁটা নিয়ে মারমুখী একপক্ষ। ২৮ নভেম্বর। ছবি: ফয়সাল হোসেন

মুন্সিগঞ্জের-২ (টঙ্গিবাড়ী-লৌহজং) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান সিনহার মনোনয়নপত্র জমা দানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে টঙ্গিবাড়ী বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের দুই সদস্যসহ উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হন।

এ ঘটনার জন্য স্থানীয় লোকজন বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যকার দ্বন্দ্বকে দায়ী করলেও দুই প্রার্থী মনে করছেন আওয়ামী লীগের ইন্ধনে এ সংঘর্ষ হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের ভাষ্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা ও জেলা বিএনপির সভাপতি আলী আজগর রিপন মল্লিকের মধ্যে রাজনৈতিক বিরোধ চলে আসছিল। রিপন মল্লিকও মুন্সিগঞ্জ-২ আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলটি মিজানুর রহমান সিনহা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালামকে প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন দেয়। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মিজানুর রহমান তাঁর কয়েকজন সমর্থককে নিয়ে টঙ্গিবাড়ী রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাচ্ছিলেন। টঙ্গিবাড়ী বাজার এলাকায় এসে পৌঁছালে তাঁদের গাড়ি লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করে আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নেওয়া শতাধিক মানুষ। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, রিপন মল্লিক ও সিনহার মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে এ ঘটনা ঘটতে পারে।

পুলিশ জানায়, মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া মিজানুর রহমান সিনহা ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম মনোনয়নপত্র উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাচ্ছিলেন। বাজার এলাকায় সালাম পক্ষের হয়ে জেলা বিএনপির সহসভাপতি রিপন মল্লিকের লোকজন এবং সিনহার লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশের দুই সদস্যসহ উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আক্তার মোল্লা ও উপজেলা যুবদলের সদস্য রিগ্যান শিকদারসহ ১০ জনকে আটক করে।

সংঘর্ষের সময় একজনকে আটক করে পুলিশ। মুন্সিগঞ্জ, ২৮ নভেম্বর। ছবি: ফয়সাল হোসেন
সংঘর্ষের সময় একজনকে আটক করে পুলিশ। মুন্সিগঞ্জ, ২৮ নভেম্বর। ছবি: ফয়সাল হোসেন

এ ব্যাপারে আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সিনহা সাহেবের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। যারা বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দিতে চায় না, এ ঘটনার সঙ্গে তারাই জড়িত।’ রিপন মল্লিক পক্ষের লোকজন হামলার সঙ্গে জড়িত কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার জানা নেই।’

এ বিষয় জানতে রিপন মল্লিকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিন ফোন ধরেননি।

মিজানুর রহমান সিনহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিন্দনীয় নৈতিকতার যত বহিঃপ্রকাশ আছে আজকে আমাদের বিরোধী পক্ষটি তা করেছে। আমাকে মনোনয়নপত্র দাখিলে বাধা দিয়েছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, এ ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত ছিল। তাদের ইন্ধনেই হামলা হয়েছে।

মিজানুর রহমান সিনহার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলিকে কয়েকবার ফোন দেওয়া হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।

এ ব্যাপারে টঙ্গিবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। ঘটনার সময় শতাধিক ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। এ ঘটনায় মিজানুর রহমান সিনহা পক্ষের নেতা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আক্তার মোল্লাসহ উভয় পক্ষের ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১০টি তাজা ককটেল ও ৫টি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ওসি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের ওপর হামলার অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করবে। এ ছাড়া উভয় পক্ষ থেকেও মামলার প্রস্তুতি চলছে।’