সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা

জেলা প্রশাসকের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপির প্রাথী বাঁশখালী আসনের জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। গতকাল দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের কক্ষে।  প্রথম আলো
জেলা প্রশাসকের হাতে মনোনয়নপত্র জমা দেন বিএনপির প্রাথী বাঁশখালী আসনের জাফরুল ইসলাম চৌধুরী। গতকাল দুপুর ১২টায় জেলা প্রশাসকের কক্ষে। প্রথম আলো

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বেলা দুইটার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নানের কক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিতে ঢুকছিলেন। এ সময় কক্ষ থেকে বের হচ্ছিলেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। দরজায় দেখা হতেই সালাম দেন মেয়র। এ সময় প্রতি উত্তরে আমীর খসরু বলেন, ‘নাছির ক্যান আছ।’ নাছির বললেন, ‘ভালা আছি বদ্দা। দোয়া গইজ্জুন।’
এরপর কক্ষে ঢোকার মুখে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর দেখা হয় প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ লতিফের সঙ্গে। দুজনে তখন কোলাকুলি করেন। হাসিমুখে ছবি তোলার জন্য দাঁড়িয়ে পড়েন। দুজনেই চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসনের প্রার্থী। ২০০৮ সালেও তাঁরা এই আসনে নির্বাচন করেছিলেন। তখন লতিফ শেষ হাসি হেসেছিলেন।
এম এ লতিফ গতকাল বলেন, ‘আমীর খসরুর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খুবই ভালো। তিনি অবশ্যই একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।’
এ রকম সৌহার্দপূর্ণ এবং উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম–১৬ আসনের মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়। মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে শত শত নেতা-কর্মী আদালত চত্বরে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এ সময় আদালতে বিভিন্ন কাজে আসা লোকজনও উৎসুক হয়ে পড়েন।
নগরের ছয়টি (তিনটি আংশিক) আসনের মনোনয়ন জমা দেওয়া হয় বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নানের কাছে। জমা দেওয়ার আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন পাঁচ প্রার্থী এবং সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাবউদ্দিন চৌধুরীর পল্টন রোডের বাসায় জড়ো হন।
এই পাঁচ প্রার্থী হলেন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালি-বাকলিয়া) আসনের মহিবুল হাসান চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর) আসনের প্রার্থী আফসারুল আমীন, চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা) আসনের এম এ লতিফ ও চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনের দিদারুল আলম ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের (বোয়ালখালী) মঈন উদ্দিন খান বাদল।
বাসার নিচতলায় বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এই প্রার্থী এবং দলের সাফল্য কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এরপর সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন প্রার্থীদের মিষ্টিমুখ করান।
পরে সেখান থেকে প্রার্থীরা নিজ নিজ গাড়িতে আদালত চত্বরের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের দিকে রওনা দেন। দুপুর সাড়ে ১২টায় তাঁরা সেখানে পৌঁছান। এ সময় সিটি মেয়র বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। একটি সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে।
কারাবন্দী বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনের পক্ষে দলীয় নেতা–কর্মীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন বেলা দুইটার দিকে। এ সময় বিপুল নেতা–কর্মী কার্যালয় চত্বরে অপেক্ষা করতে থাকেন। মনোনয়ন জমা দিয়ে নগর বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, উৎসব উৎসব একটা ভাব সৃষ্টি হয়েছে। তবে গ্রেপ্তার ও আতঙ্ক এখনো কমেনি।
বিকেল চারটার দিকে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের স ম আবদুস সামাদসহ কয়েকজন মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন। এ সময় কার্যালয়ের নিচে বিপুলসংখ্যক নেতা–কর্মী অবস্থান করছিলেন। শুধু দলীয় নেতা–কর্মী নয় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে অনেক সাধারণ মানুষও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত হন। ৮৫ বছর বয়স্ক এক বৃদ্ধ নগরের বহদ্দারহাট থেকে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে অনেক আশা–আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। কী হচ্ছে তা দেখতে এসেছি। কোনো প্রার্থীর পক্ষে আসিনি।’