২৬ কোটি টাকা রওশনের কাছে রেখেছেন এরশাদ

এইচ এম এরশাদ, রওশন এরশাদ
এইচ এম এরশাদ, রওশন এরশাদ

সম্পদের মালিকানার ক্ষেত্রে এইচ এম এরশাদ ও তাঁর স্ত্রী রওশন এরশাদ কেউই কারও চেয়ে তেমন পিছিয়ে নেই। তবে নগদ টাকা নিজের কাছে না রেখে স্ত্রীর কাছেই বেশি রেখেছেন এরশাদ। এরশাদের হাতে নগদ টাকার পরিমাণ ১৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা। তবে তিনি স্ত্রীর কাছে রেখেছেন ২৬ কোটি ২০ লাখ ২৯ হাজার টাকা।

সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ ও রওশনের একাদশ সংসদ নির্বাচনে উপলক্ষে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

হলফনামায় দেখা গেছে, রওশনের নামে থাকা স্থাবর সম্পদের দাম ৭ কোটি ৩১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। আর এরশাদের নিজের নামে থাকা স্থাবর সম্পদের দাম ২ কোটি ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকা। তবে অস্থাবর সম্পদ স্ত্রীর চেয়ে এরশাদের কাছেই বেশি আছে। এরশাদের নামে থাকা অস্থাবর সম্পদের মূল্য ৫৮ কোটি ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৯৮ টাকা। রওশনের নামে আছে ৩৬ কোটি ৯২ লাখ ২৪ হাজার ৭১৩ টাকার অস্থাবর সম্পদ।

বিভিন্ন ব্যাংকে এরশাদের নামে আছে ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬ টাকা। শেয়ারবাজারে আছে ৪৪ কোটি টাকা। এফডিআর আছে ৯ কোটি ২০ লাখ টাকার। এরশাদের ব্যবসায় মূলধন আছে ১২ লাখ ৫১ লাখ টাকা। তাঁর আসবাব সামগ্রীর অর্জনকালীন মূল্য ৩০ হাজার টাকা।

এরশাদের নামে গাড়ি আছে তিনটি। এর মধ্যে একটি ল্যান্ড ক্রুজারের দাম ৫৫ লাখ, একটি নিশান কারের দাম ১৮ লাখ ও আরেকটি ল্যান্ড ক্রুজারের দাম ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

এরশাদের স্থাবর সম্পদের মধ্যে আছে নিজের নামে তিনটি ও স্ত্রীর নামে দুটি ফ্ল্যাট, নিজের নামে একটি দোকান ও স্ত্রীর নামে চার খণ্ড জমি। তাঁর বারিধারার ফ্ল্যাটের দাম উল্লেখ করা হয়েছে ৬২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, বনানীর ফ্ল্যাটের দাম ৪৯ লাখ টাকা ও গুলশানের ফ্ল্যাটের দাম ৬২ লাখ টাকা। আর স্ত্রীর নামে গুলশানে থাকা ফ্ল্যাটের দাম ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

এরশাদ তাঁর হলফনামায় দেখিয়েছেন, ব্যবসা থেকে তাঁর বার্ষিক আয় হয় ২ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা। আর বিশেষ দূত হিসেবে সম্মানী পান ১৯ লাখ ৪ হাজার ৬৯৬ টাকা। সাংসদ হিসেবে সম্মানী পান ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ থেকে সম্মানী পান বছরে ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ১০ টাকা।

দশম সংসদ নির্বাচনে দেওয়া হলফনামায় কৃষি খাত থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে আড়াই কোটি টাকা এবং এফডিআরের সুদ থেকে ৩২ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছিলেন। তবে এবার এসব খাত থেকে এরশাদের কোনো আয়ের তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে এরশাদের ৬ কোটি ৭৮ লাখ ৯৮ হাজার ৭১৫ টাকার ঋণ ছিল। এর মধ্যে গাড়ির ঋণ ছিল ১৪ লাখ এবং ব্যক্তিগত ঋণ ছিল এক কোটি ৭৫ লাখ ৯৬ হাজার ২১৯ টাকা। আর ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে ঋণ ছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ২ হাজার ৪৯৬ টাকা। এখন ইউনিয়ন ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংকে এরশাদের ঋণ আছে ২ কোটি ৩২ লাখ ৪ হাজার ৬৩৫ টাকা।

রওশনের হিসাব:
রওশন হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তাঁর নামে ১৯৯১ সালের দুর্নীতির একটি মামলা ছিল। সেই মামলায় হাইকোর্ট তাঁকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করলে আপিল বিভাগ তা বহাল রেখে মামলাটি নিষ্পত্তি করেন। বর্তমানে তার নামে কোনো মামলা নেই।

রওশনের বাড়ি ভাড়া থেকে আয় ১২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। ২০১৪ সালে বাড়ি ভাড়া থেকে তাঁর আয় ছিল ৪ লাখ ৫ হাজার টাকা।

বর্তমানে শেয়ার, সঞ্চয় ও ব্যাংক আমানত থেকে রওশনের আয় ৮৮ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ৫ বছর আগে এই খাত থেকে তাঁর আয় ছিল ১ কোটি ৯৪ লাখ ৫২ হাজার টাকা।

হলফনামায় রওশন উল্লেখ করেছেন, বর্তমানে তিনি চাকরি থেকে আয় করেন ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রওশনের কাছে আছে নগদ টাকা ৫০ লাখ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ২৫ কোটি ৭০ লাখ। সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ আছে ৬০ লাখ টাকা। তাঁর বাস, ট্রাক ও অন্যান্য গাড়ির অর্জনকালীন দাম ১ কোটি ৫৩ লাখ। তাঁর কাছে থাকা স্বর্ণের পরিমাণ ১০০ ভরি। এর অর্জনকালীন দাম ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। তাঁর ইলেকট্রনিক সামগ্রীর অর্জনকালীন দাম ৭ লাখ টাকা। আসবাবপত্রের দাম ৮ লাখ টাকা।

রওশনের কৃষি জমির অর্জনকালীন দাম ৩৩ লাখ টাকা। তাঁর নামে থাকা অকৃষি জমির অর্জনকালীন দাম ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। দুটি ফ্ল্যাট ও একটি বাড়ির অর্জনকালীন দাম ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।