দল গোছাচ্ছে আওয়ামী লীগ, মাঠে নেই বিএনপি-জামায়াত

ঢাকা-১৫ সংসদীয় আসন থেকে বর্তমান সাংসদ কামাল আহমেদ মজুমদারের মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে আওয়ামী লীগ। চলছে ঘরোয়া বৈঠক, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময়। অন্যদিকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, গ্রেপ্তার-আতঙ্ক ও পুলিশি হয়রানির মুখে তাঁরা মাঠে দাঁড়াতে পারছেন না। এলাকায় জামায়াতে ইসলামীর কোনো সক্রিয়তাও চোখে পড়েনি।

এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলের বিশেষ সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন ও যুবদলের নেতা মামুন হাসান। এ ছাড়া একই আসনে জামায়াতের সেক্রেটারি শফিকুর রহমানও মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে এই আসনে শেষ পর্যন্ত কে সংসদ নির্বাচন করবেন, তা জোটগতভাবে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এই মুহূর্তে কর্মী-সমর্থকদের বেশির ভাগ বাড়িতে থাকতে সাহস পাচ্ছেন না। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগেই বিরোধীদের দমনে গণগ্রেপ্তার ও গায়েবি মামলার মধ্য দিয়ে প্রবল ভয়ের পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। এতে কাগজে-কলমে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক বলা হলেও তা কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, সে ব্যাপারে তাঁরা সন্দিহান।

এদিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানাচ্ছেন, কামাল আহমেদ মজুমদারের সঙ্গে এই আসনের জন্য ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক এম সাইফুল্লাহ্ সাইফুল ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেন মনোনয়ন ফরম তুলেছিলেন। কামাল আহমেদ মজুমদারের দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর থেকে তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার ওপর জোর দিয়েছেন।

নির্বাচনী প্রস্তুতির ব্যাপারে কাফরুল থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম বলেন, ‘এলাকায় আরও দু-একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু এখন সবাই বিভেদ ভুলে কামাল আহমেদ মজুমদারের পক্ষে কাজ করছেন। আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল দলের বিভেদ দূর করা। এ ক্ষেত্রে আমরা পুরোটাই সফল হয়েছি।’ তিনি জানান, এর মধ্যে ৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে দুটি নির্বাচনী কার্যালয় খোলা হয়েছে। ৯ ডিসেম্বরের আগেই সব ওয়ার্ডে কার্যালয় তৈরির কাজ শেষ করা হবে। প্রয়োজনে এক ওয়ার্ডে একাধিক কার্যালয়ও হতে পারে।

মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদুল কবির বলেন, এই মুহূর্তে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠনের কাজ চলছে। প্রচার-প্রচারণার ধরন কেমন হবে, সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে। সব কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কামাল আহমেদ মজুমদারের মালিকানাধীন মোহনা টেলিভিশনের কার্যালয় থেকে।

বিপরীত চিত্র পাওয়া যায় বিএনপির নেতাদের বক্তব্যে। দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘একটা স্বাস্থ্যকর, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখছি না। প্রস্তাবক হিসেবে যিনি আমার মনোনয়ন ফরমে স্বাক্ষর করেছিলেন, শুক্রবার তাঁর বাড়িতেই পুলিশ হানা দিয়েছে।’ বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বিরোধীদের জন্য নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার কোনো সুযোগই এই সরকার রাখেনি।’

এই আসনে দল থেকে আরেক মনোনয়নপ্রাপ্ত যুবদল নেতা মামুন হাসান বর্তমানে রাজনৈতিক মামলায় কারাগারে আছেন। বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির (উত্তর) দপ্তর সম্পাদক এ বি এম এ রাজ্জাক প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেভাবে ধরপাকড় চলছে, তাতে কৌশলগত কারণেই আমাদের মাঠে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগে সেই সুযোগ আসবে বলেও মনে হচ্ছে না।’

এদিকে এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার জন্য প্রতিনিধি মারফত মনোনয়ন ফরম কেনেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান। মনোনয়ন ফরম জমা দিতেও তিনি যাননি। জামায়াতের অন্য নেতা-কর্মীদের মতোই তাঁর কর্মকাণ্ড এখন পর্যন্ত অপ্রকাশ্য। তাই এ ব্যাপারে তাঁর কিংবা দলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।