জাপার পক্ষে মাঠে আ.লীগ, বাবা-ছেলে বিএনপির প্রার্থী

ঢাকা-৪ আসন মিত্র দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা আছে। কিন্তু মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে যদি সমঝোতা না হয়, তবে তিনি প্রার্থী হবেন বলে আশাবাদী।

এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস (সহকারী একান্ত সচিব) আওলাদ হোসেন। তবে এ আসনটির বিষয়ে আওয়ামী লীগ এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। আওলাদ হোসেনকে দল থেকে মনোনয়ন চিঠিও দেওয়া হয়নি। আর আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জাতীয় পার্টির প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনে প্রস্তুতি শুরু করছেন।

এদিকে ঢাকা-৪ আসনে বিএনপির পক্ষে দলীয় চিঠি দেওয়া হয়েছে সাবেক সাংসদ সালাহ্‌ উদ্দিন আহমেদ ও তাঁর ছেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদকে। তাঁরা দুজনই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁদের মধ্য থেকে কে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে দলটির তৃণমূল পর্যায়ের নেতা–কর্মীদের মধ্যে জল্পনা-কল্পনা চলছে।

শ্যামপুর-কদমতলী শিল্পাঞ্চল, বুড়িগঙ্গা-তীরবর্তী পোস্তগোলা, জুরাইন, দোলাইরপাড়, মীর হাজিরবাগ ও গেন্ডারিয়ার একাংশ নিয়ে ঢাকা-৪ আসন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৭, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড এবং শ্যামপুর ইউনিয়ন আসনটির অন্তর্ভুক্ত। ভোটার ২ লাখ ৮৪ হাজার। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ১৫ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ
২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন ঢাকা-৪ আসনে জয়ী হন। স্বতন্ত্র নির্বাচন করে হেরে যান আওলাদ হোসেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সানজিদা খানমের কাছে হেরে গিয়েছিলেন সৈয়দ আবু হোসেন।

আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে এবারও এই আসনে সৈয়দ আবু হোসেন মনোনয়নপ্রত্যাশী। ইতিমধ্যে তাঁকে অঘোষিতভাবে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। এ জন্য এই আসনে আওয়ামী লীগের নেতারা মনোনয়নপত্র জমা দেননি। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে এই আসনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর যদি সৈয়দ আবু হোসেনকেই সমর্থন দেওয়া হয়, তা হলে আওলাদ হোসেন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। তিনি বলেন, ‘সৈয়দ আবু হোসেন ঋণখেলাপি বলে জানতে পেরেছি। আগামী রোববার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় যদি তিনি বাদ পড়ে যান, তাহলে আমি দলীয় প্রার্থী হব। না হয়, আমার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেব।’

জানতে চাইলে সৈয়দ আবু হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঋণখেলাপি নন। তাঁর বিরুদ্ধে একটি পক্ষ অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে জাতীয় পার্টি থেকে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ তাঁর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে মহাজোটের প্রার্থী হয়ে জয় লাভ করার পর নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নকাজ করেছি। এ আসনে আবার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখব।’

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও মহানগর দক্ষিণ কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেননি। বরং গত বুধবার সৈয়দ আবু হোসেনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি

গত মঙ্গলবার ঢাকা-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ সালাহ্‌ উদ্দিন আহমেদ ও তাঁর ছেলে তানভীর আহমেদকে দলীয় মনোনয়ন চিঠি দেওয়া হয়। এর আগ পর্যন্ত সালাহ্‌ উদ্দিন ঢাকা-৫ আসন ও তানভীর ঢাকা-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এখন বাবা-ছেলের একই আসনে মনোনয়ন চিঠি মিলেছে। কিন্তু কে চূড়ান্ত মনোনয়ন পাবেন, তার জন্য অধীর আগ্রহে আছেন দলটির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা?

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতা–কর্মী বলেন, সালাহ্‌ উদ্দিন ও তানভীরের মধ্যে কে প্রার্থী হবেন, তা মুখ্য নয়। দল থেকে যাঁকেই সমর্থন দেওয়া হবে, তাঁর বিজয় নিশ্চিত। এ জন্য নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

সালাহ্‌ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কৌশল হিসেবে একই আসনে দুজনকে মনোনয়ন চিঠি দিয়েছে বিএনপি। তবে দল থেকে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি বা তাঁর ছেলে নির্বাচনে অংশ নেবেন।