ঢাবি শিক্ষক খালেদ মাহমুদের মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দাবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের শিক্ষক খালেদ মাহমুদের মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দাবিতে মানববন্ধনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের শিক্ষক খালেদ মাহমুদের মামলা প্রত্যাহার ও মুক্তি দাবিতে মানববন্ধনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে করা মামলাকে 'মিথ্যা' আখ্যা দিয়ে মামলা প্রত্যাহার ও তাঁর মুক্তির দাবি জানিয়েছেন ওই ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্য উন্মোচনেরও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। 

আজ সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট আয়োজিত এক মানববন্ধনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এ দাবি জানান ৷

এর আগে গত ২৫ ও ৩০ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি পৃথক দুটি বিজ্ঞপ্তিতে খালেদ মাহমুদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ জানায় ৷ খালেদ মাহমুদকে ধর্ষণ ও যৌতুকের অভিযোগে করা পৃথক দুটি মামলায় গত ২২ নভেম্বর গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘খালেদ মাহমুদকে গ্রেপ্তার, হেনস্তা ও প্রভাব বিস্তারের তথ্য আমাদের কাছে এসেছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জেনেছি, খালেদ একজন জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য শিক্ষক ৷ তাঁর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো অতিরঞ্জিত ৷ বিবাহের দীর্ঘ সময় পর যখন যৌতুকের মামলা হয়, এর সত্যতা যেকোনো সুস্থ মানুষকে ভাবায় ৷ আমরা চাই না, ন্যায়বিচারের বাইরে গিয়ে কেউ প্রভাব বিস্তার করুক ৷ সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উন্মোচন করা হোক ৷ খালেদ অন্যায় করে থাকলে তাঁর শাস্তি হবে ৷ আমরা ন্যায়বিচার চাই ৷ '

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শিক্ষকদের মর্যাদা ভিন্ন ৷ একে নিয়ে খেলা করবেন না৷ খালেদ মাহমুদের বিষয়টি বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে গেছে ৷ তাঁকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক ৷ কালক্ষেপণ না করে অতি দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হোক ৷ যারা অন্যায় করেছে, তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক ৷’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. রহমতউল্লাহ মানববন্ধনে বলেন, ‘আমি আইনের শিক্ষক ৷ খালেদ মাহমুদের বিরুদ্ধে হওয়া দুটো মামলার এজাহারই পড়েছি ৷ দুটোই আমার কাছে সাজানো নাটক মনে হয়েছে ৷ আমরা চাই, সামাজিক অবস্থান বা প্রভাবকে ব্যবহার করে কেউ যেন বিচারকে প্রভাবিত করতে না পারে ৷ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কাউকে গ্রেপ্তারের আগে উপাচার্যকে যেন অবহিত করা হয় ৷’

খালেদ মাহমুদের সহকর্মী ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মেলিতা মেহজাবীন বলেন, ‘আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার কিছুদিন পরই খালেদ যোগ দিয়েছেন ৷ তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, এসব আমরা কল্পনাই করতে পারি না। খালেদ খুবই প্রফেশনাল ও স্মার্ট ৷’

অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী বলেন, ‘খালেদ ও তাঁর বাবা জেলে, মা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ৷ এটি একটি ভয়ংকর ঘটনা ৷ ঘটনাটি সাজানো মনে হচ্ছে৷’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘প্রভাবশালী হলেই কি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে জেলে পাঠানো যায়?’

ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার বলেন, ‘কারও প্রতি অন্যায় আমরা সহ্য করব না। খালেদের ওপর যেন অবিচার না হয়, সেটি আমরা দেখছি।’

ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক এ কে এম সাইফুল মজিদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম শহিদুল ইসলাম, মৃত্তিকা বিজ্ঞান ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ফারহান ইমতিয়াজ ও সুতপা ভট্টাচার্য, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের প্রধান ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তাঁরা খালেদ মাহমুদের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও তাঁর মুক্তি দাবি করেন ৷

১২ নভেম্বর ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক খালেদ মাহমুদের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর বিবাহবিচ্ছেদ হয় ৷ এর দুই সপ্তাহের মধ্যে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরপর দুটি মামলা হয় ৷ একটি ধর্ষণ মামলা, অন্যটি যৌতুকের ৷ ধর্ষণের অভিযোগকারী এক নারীর স্বামী বাদী হয়ে রাজধানীর ভাটারা থানায় ধর্ষণের মামলাটি করেন ৷ যৌতুকের মামলাটি করে খালেদ মাহমুদের স্ত্রীর পরিবার ৷ ওই মামলায় খালেদ মাহমুদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের আসামি করা হয়েছে ৷