প্রথম ভোট উৎসবের অপেক্ষায়

জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়া নিয়ে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর রয়েছে দারুণ কৌতূহল। সম্প্রতি পঞ্চগড় সদরের হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিলুপ্ত গাড়াতি ছিটমহলে।  প্রথম আলো
জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়া নিয়ে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর রয়েছে দারুণ কৌতূহল। সম্প্রতি পঞ্চগড় সদরের হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিলুপ্ত গাড়াতি ছিটমহলে। প্রথম আলো

দীর্ঘ ৬৮ বছরের বঞ্চনা শেষে ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে থাকা ছিটমহলের বাসিন্দারা মুক্তির নিশ্বাস ফেলেন। দুই দেশের স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর হওয়ায় সেই সময় বাংলাদেশের অধিবাসী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয় পঞ্চগড়ের ৩৬ ছিটমহলের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-১ ও ২ আসনে তাদের মধ্যে জীবনে প্রথমবারের মতো ৮ হাজার ৯৩৫ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন।

বিলুপ্ত এই ছিটমহলগুলোর ভোটারদের ৪ হাজার ৬৭৪ জন পুরুষ ও ৪ হাজার ২৬১ জন নারী। ওই দুটি আসনে এবার নতুন ভোটারের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৮৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৮ হাজার ৯৫৬ জন ও নারী ৪৮ হাজার ৮৯৪ জন। নতুন ভোটারদের দুই–তৃতীয়াংশই তরুণ।

জেলার বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোর নতুন ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে রয়েছে দারুণ কৌতূহল; সঙ্গে নানা জল্পনাকল্পনা। নির্বাচনে ভোট দেওয়ার মতো সুষ্ঠু পরিবেশ থাকবে, নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে তাঁদের পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোর উন্নয়ন হবে ও বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে—এমনটাই প্রত্যাশা তাঁদের।

বোদার সাবেক পুটিমারী ছিটমহলের বাসিন্দা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সম্প্রতি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করেছি। ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে আমরা দেশ পেয়েছি; পরিচয় পেয়েছি; এবার প্রথম সংসদ নির্বাচনের ভোট দেব। আমরা নির্বাচনের নিরাপদ পরিবেশ চাই। নতুন সরকারে যাঁরা আসবেন, তাঁদের কাছে একটাই চাওয়া, তাঁরা যেন আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন।’

একই ছিটমহলের প্রবীণ বাসিন্দা মো. আলীমউদ্দীন (৭০) বলেন, ‘জীবনের শেষ বয়সে এসে এমপি নির্বাচনে (সংসদ) ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। এখন আমাদের একটাই চাওয়া, আমরা যাতে নিরাপদে ভোট দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারি। আমাদের নিজের ভোট যেন আমরা নিজেরাই দিতে পারি। যে সরকারই আসুক, তারা যেন আমাদের এই পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর উন্নয়নে কাজ করে।’

সাবেক নাজিরগঞ্জ ছিটমহলের বাসিন্দা পঞ্চগড় মকবুলার রহমান সরকারি কলেজের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র রায়হান কবীর বলেন, ‘জীবনের প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেব; এটা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। আমাদের পূর্বপুরুষরা দীর্ঘদিন এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। এবার তাঁদের সঙ্গে আমরাও ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। আমরা চাই, সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।’

পঞ্চগড় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল আলম বলেন, জেলায় এবার যে নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ৮ হাজার ৯৩৫ জন বিলুপ্ত ছিটমহলের বাসিন্দা। তাঁর আশা, উৎসবমুখর পরিবেশে জেলার ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। সুষ্ঠু ভোট গ্রহণে তাঁদের সব ধরনের প্রস্তুতি চলছে। তিনি আরও বলেন, এবার পঞ্চগড়-১ আসনে ১৫৫টি ও পঞ্চগড়-২ আসনে ১৩১টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে।