জনবসতিতে দেখা মিলল ৪০টি গুইসাপ

নারায়ণগঞ্জের একটি খাল থেকে ধরা হয় নয়টি বড় গুইসাপ। পরে এগুলোকে গাজীপুর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জের একটি খাল থেকে ধরা হয় নয়টি বড় গুইসাপ। পরে এগুলোকে গাজীপুর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

অনেকের কাছে বড় গুইসাপ, কেউ বলেন রামগদি, কারও কাছে কালো গুই। বনে, পাহাড়ি কিংবা উপকূলীয় অঞ্চলে এর আবাসস্থল হলেও ৪০টি রামগদির দেখা মিলেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নবীগঞ্জে। এর মধ্যে নয়টি রামগদি ধরা হয়। পরে এসব অবমুক্ত করা হয় গাজীপুর ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে।

বুধবার সকালের দিকে উদ্ধারের পর বিকেলের দিকে এসব গুইসাপ অবমুক্ত করা হয়। উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেয় বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের নবীগঞ্জ রেললাইন এলাকার একটি খালের ধারে এসব গুইসাপের সন্ধান পাওয়া যায়। প্রায় বিপন্ন হয়ে যাওয়া প্রাণীগুলোকে বন বিভাগ ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়। পরে বুধবার সকালে বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এবং বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট সেখানে উদ্ধার অভিযান চালায়। এ সময় নয়টি গুইসাপ ধরা সম্ভব হয়।

বন্য প্রাণী পরিদর্শক আবদুল্লাহ আস সাদিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবর্জনাপূর্ণ একটি খালের ধারে এসব রামগদি পাওয়া যায়। এরা খালের ধারে রোদ পোহাচ্ছিল। এদের আবাসস্থল ক্রমে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তাই এদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবারের পুনর্বাসনকাজে সার্বিক সহযোগিতা করেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মইন মাহমুদ ও স্থানীয় একাত্তর মেম্বার সংগঠনের সদস্যরা।’ তবে এদের আবাসস্থল এখন প্রধানত সুন্দরবন এলাকায়। তাই জনবসতি এলাকায় রামগদি পাওয়াকে বিরল ঘটনা বলে দাবি এই বন কর্মকর্তার।

আবদুল্লাহ আস সাদিক জানান, ‘প্রতিটি রামগদির দৈর্ঘ্য পাঁচ থেকে সাত ফুটের মতো। তবে নয় ফুট দৈর্ঘ্যের কয়েকটি রামগদিকে খালটিতে দেখা গেছে।’

বড় এই গুইসাপ রামগদি হিসেবেও পরিচিত। নারায়ণগঞ্জ থেকে ধরা রামগদিগুলো গাজীপুর জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
বড় এই গুইসাপ রামগদি হিসেবেও পরিচিত। নারায়ণগঞ্জ থেকে ধরা রামগদিগুলো গাজীপুর জাতীয় উদ্যানে অবমুক্ত করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় গুইসাপ বা রামগদি হলো বড় জাতের গিরগিটি। এগুলো ১০ ফুটের বেশি লম্বা হয়। এগুলো দ্রুত সাঁতার কাটতে পারে, আবার দ্রুত গাছেও উঠতে পারে। চামড়ার জন্য চোরা শিকারিরা রামগদি ধরে থাকে। রামগদি দেখতে গাঢ় বাদামি ও কালচে রঙের হয়। এর সঙ্গে হলুদে ভাবও থাকে। পা ও নখ লম্বাটে। লেজ চ্যাপ্টা। এরা কাঁকড়া, শামুক, ইঁদুর, হাঁস-মুরগির ডিম, পচা–গলা প্রাণী খেয়ে থাকে। মাছ, সাপ, ব্যাঙ, ছোট কুমির, কুমিরের ডিম, কচ্ছপ খাওয়ার কারণে এ ধরনের গুইসাপ নদী বা খালের ধারে আবাসস্থল গড়ে।

অবশ্য বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞদের দাবি, একসময় সারা দেশে বড় গুইসাপ বা রামগদি বসবাস করত। এখন সুন্দরবন, পাহাড়ি ও উপকূলীয় এলাকায় এদের দেখা যায়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবন, চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলের বনে, নদী বা খালের ধারে এখনো রামগদি বা বড় গুইসাপ দেখা যায়। তবে সংখ্যায় কম। তাই নারায়ণগঞ্জের খালের ধারে এই প্রাণী পাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

এই উদ্ধার অভিযানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন ঢাকার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকন আর তদারকিতে ছিলেন আবদুল্লাহ আস সাদিকের পাশাপাশি বন্য প্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা।