কৌশলী প্রচারণা প্রার্থীদের

>
  • আওয়ামী লীগ, বিএনপি কেউ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ না করায় কোনো প্রার্থীই আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তও হচ্ছেন না।
  • ১০ ডিসেম্বরের আগে প্রচারণায় নামলে তা হবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন
  • বর্ধিত সভা ও কর্মী সমাবেশের নামে প্রার্থীরা এখন মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
  • আর মাঠের এসব ছবি তাঁরা ফেসবুক পাতায় পোস্ট করে ভোট চাচ্ছেন

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা মাঠে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে সমানে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। তবে ১০ ডিসেম্বরের আগে এই প্রচারে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও কেউ কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন না। এ জন্য কোনো প্রার্থীই আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তও হচ্ছেন না। প্রার্থীরাও এটাকে সুযোগ হিসেবে দেখছেন।

বর্ধিত সভা ও কর্মী সমাবেশের নামেও প্রার্থীরা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আর মাঠের এসব প্রচারমূলক সমাবেশের ছবি তাঁরা পোস্ট করছেন নিজ নিজ ফেসবুক পাতায়। মূল প্রার্থীদের পাশাপাশি তাঁদের কর্মী–সমর্থকেরাও নিজ নিজ ফেসবুক থেকে নেতা বা দলের হয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী শফিকুল হক গত সোমবার পবা উপজেলার চর মাঝারদিয়ার বাজারে রীতিমতো জনসভার মতো করে বক্তব্য দেন। মাঠে চেয়ার পেতে বসে তাঁর সমর্থকেরা বক্তব্য শোনেন। গত মঙ্গলবার তিনি পবা উপজেলার বড়গাছি বাজারে স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় তিনি বাজারের প্রতিটি দোকানের মালিক ও বিক্রেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করেন। গতকাল বুধবার সকাল থেকে জেলার মোহনপুর এলাকায় একইভাবে নির্বাচনী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এভাবে তিনি যেখানেই যাচ্ছেন, সেখান থেকে ছবি তুলে নিজ ফেসবুক পাতায় পোস্ট দিচ্ছেন।

এ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ আয়েন উদ্দিন গত রোববার মোহনপুর উপজেলার বাকশিমইল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে মঞ্চ তৈরি করে এলাকার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে জরুরি সভা করেন। দুদিন পর গত মঙ্গলবার পবায় তিনি মতবিনিময় সভা করেন। এ সভায় নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানানো হয়। তাঁর একজন সমর্থক কয়েক ঘণ্টা পরই এ সভার ছবি তাঁর ফেসবুকে দিয়ে লিখেছেন, ‘৩০ তারিখ সারা দিন, আয়েন উদ্দিন এমপিকে নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’

একইভাবে রাজশাহী সদর আসনের মহাজোটের প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা গত রোববার রাজশাহী নগরের সাহেববাজার বড় মসজিদ এলাকায় নির্বাচনী শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় প্রার্থীর সঙ্গে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও ১৪ দলের রাজশাহীর সমন্বয়কারী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারসহ জোটের নেতারা ছিলেন। শুভেচ্ছা বিনিময়ের ছবি তাঁর সমর্থকেরা ফেসবুক পাতায় পোস্ট দিয়েছেন। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু বর্ধিত সভার আদলে প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্বাচনী কর্মিসভা করছেন। গত মঙ্গলবার তিনি নগরের হাদিরমোড়ে খাদেমুল ইসলাম স্কুলমাঠে কর্মিসভা করেন।

ওই দিন বিকেলে বুলনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তিনি কর্মিসভা করেন। এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিজানুর রহমান বলেন, এ দেশের মানুষ এখন নতুন সূর্যের অপেক্ষায় রয়েছে। আর এই সূর্য হচ্ছে খালেদা জিয়া। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করতে বিএনপি তথা ২০–দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বিজয়ী করতে হবে।

রাজশাহী-১ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী বর্ধিত সভা ও কর্মিসভা করছেন। গত সোমবার তিনি তানোর উপজেলার তালন্দ ও কামারগাঁ এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি আলাদাভাবে নারী ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি এলাকার উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সবাইকে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। এসব ছবি তাঁর সমর্থকেরা ওই দিন সন্ধ্যায় নিজ নিজ ফেসবুকে পোস্ট দেন।

রাজশাহীতে সবচেয়ে অভিনব প্রচার চালাচ্ছেন রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন। এগুলো তাঁর নিজের ফেসবুক পাতায় দিয়েছেন। খুবই নান্দনিকভাবে এই প্রামাণ্যচিত্রগুলো তৈরি করা হয়েছে। একজন ভুক্তভোগীর মুখ দিয়ে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। সেখানে ওই দরিদ্র মানুষটি তাঁর ভোগান্তির বর্ণনা দিয়ে বলেন, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় আগুন লেগে কীভাবে তাঁর গরুটি পুড়ে মারা গিয়েছিল আর তিনি নিঃস্ব হয়েছিলেন।

জানতে চাইলে রাজশাহী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এস এম আবদুল কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ১০ ডিসেম্বরের আগে কেউ নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারবেন না। এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো প্রার্থী তাঁদের কাছে এ ধরনের আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ করেননি।