দুই সাংসদের চেয়ে স্ত্রী ধনী, দুজনের স্ত্রী গরিব হচ্ছেন

হবিগঞ্জের সাংসদ আবু জাহির ও সাংসদ মাহবুব আলী—দুজনই অর্থসম্পদশালী। তবে তাঁদের চেয়ে বেশি ধনী তাঁদের স্ত্রীরা। বিশেষ করে স্ত্রীদের ব্যাংক-ব্যালান্সের বহর স্বামীদের চেয়েও বড়। জেলার অপর দুই সাংসদ আবদুল মজিদ খান ও আবদুল মুনিম চৌধুরীর স্ত্রীদের সম্পদ দিনে দিনে কমে আসছে।

চার সাংসদের হলফনামা পর্যালোচনা করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। এবারের নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্রের সঙ্গে এসব হলফনামা জমা দিয়েছেন তাঁরা।

হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনের বর্তমান সাংসদ মো. আবু জাহির। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বিভিন্ন খাতে তাঁর বার্ষিক আয় ৩৭ লাখ ৭ হাজার ৯২৬ টাকা। সাংসদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় চার কোটি টাকা। অর্থসম্পদে সাংসদের চেয়ে কম যান না তাঁর স্ত্রী আলেয়া বেগম। হলফনামা মোতাবেক, তাঁর বার্ষিক আয় ১২ লাখ টাকা। তাঁর ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ২০ লাখ ১১ হাজার ৯৫৩ টাকা। জায়গা-জমি আছে ১ কোটি ৭২ লাখ টাকার। শেয়ার ব্যবসায় তাঁর আমানত জমা আছে ২৪ লাখ ৯১ হাজার ৯২৫ টাকা। সঞ্চয় আমানত জমা আছে ৩৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯৩৫ টাকা। এ ছাড়া আলেয়ার নামে আছে ৪০ লাখ টাকা মূল্যের একটি গাড়ি। আছে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫০ ভরি স্বর্ণ এবং ২ লাখ ৯০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী।

এ বিষয়ে জানতে সাংসদ আবু জাহির প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ও তাঁর স্ত্রীর ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তাঁদের আয় বেড়েছে। সরকারকে তাঁরা নিয়মিত রাজস্ব দেন। এখানে অস্বাভাবিক হারে কোনো আয় তাঁদের বাড়েনি।

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট ও মাধবপুর) আসনের বর্তমান সাংসদ মো. মাহবুব আলী। তিনিও এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। সাংসদের হলফনামায় দেখা গেছে, বিভিন্ন খাতে তাঁর বার্ষিক আয় ৫৬ লাখ ৪৮ হাজার ৯০৫ টাকা। তাঁর হাতে নগদ টাকা রয়েছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার। ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ৮০ লাখ ৭ হাজার ৫১৬ টাকা। তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ ৩ কোটি ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সাংসদের স্ত্রী শামীমা জাফরিনের ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ১ কোটি ৮ হাজার ১৮ টাকা। ব্যবসায় অংশীদারত্ব আছে ৭১ লাখ ৪২ হাজার ৮৮০ টাকার। স্বর্ণ আছে ৪ লাখ টাকার। সঞ্চয়পত্র আছে ২৫ লাখ টাকার। আছে ৭৮ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪০ টাকার এফডিআর।

মাহবুব আলীর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। হবিগঞ্জের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, একজন সাংসদ নানান খাতে আয় করে থাকেন। তাঁদের এ আয় কিছুটা সমান্তরাল করার জন্য স্ত্রীদের নামে এ টাকা রাখেন।

‘গরিব’ হচ্ছেন দুই সাংসদের স্ত্রী: হবিগঞ্জ-২ (বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জ) আসনের সাংসদ আবদুল মজিদ খান। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। সাংসদের বার্ষিক আয় ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার ৪০০ টাকা। তাঁর হাতে নগদ টাকা রয়েছে ২ লাখ। ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ২৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা। তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় আড়াই কোটি টাকা। সাংসদের স্ত্রী আফরোজা বেগম ধীরে ধীরে গরিব হচ্ছেন। বর্তমানে তাঁর ব্যাংক হিসাবে জমা আছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অথচ ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় তাঁর ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

সম্পদ কমেছে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ ও বাহুবল) আসনের সাংসদ আবদুল মুনিম চৌধুরীর স্ত্রীর। তাঁর স্ত্রীর নামে আছে শুধু ৭০ হাজার টাকা মূল্যের জমি। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে তাঁর নামে ছিল ৫০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণ। এবারের হলফনামায় স্ত্রীর কোনো স্বর্ণ আছে কি না, তা উল্লেখ করেননি সাংসদ।

আবদুল মুনিম চৌধুরী জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে ২০১৪ সালে সাংসদ হয়েছিলেন। এবার দল থেকে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় এবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মুনিম চৌধুরী হলফনামায় বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬০ টাকা। তাঁর হাতে নগদ টাকা রয়েছে ১২ লাখ। ব্যাংকে জমা রয়েছে ৫ লাখ টাকা। তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মোট পরিমাণ ৭২ লাখ টাকা।