পরিচিতি ধনাঢ্য হিসেবে নির্বাচন দানের টাকায়

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার–৪ আসনে প্রার্থী সাতজন। এলাকায় তাঁদের পরিচিতি ধনাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে। জীবনযাত্রাও উচ্চবিত্তের। কিন্তু তাঁরা নির্বাচন করছেন দানের টাকায়। জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে দাখিল করা প্রার্থীদের হলফনামা পর্যালোচনা করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
মিয়ানমার সীমান্তের দুটি উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফ নিয়ে জাতীয় সংসদের কক্সবাজার-৪ আসন।
এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন আক্তার। তিনি এই আসনের বর্তমান সাংসদ আবদুর রহমান বদির স্ত্রী। শাহীনের নির্বাচনী ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০ লাখ টাকা নিয়েছেন স্বামী আবদুর রহমান বদির কাছ থেকে। তাঁর নগদ টাকা আছে ৫ লাখ, ব্যাংকে জমা ১০ হাজার।
বিএনপি প্রার্থী শাহজাহান চৌধুরী এ আসনের চারবারের নির্বাচিত সাংসদ। সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। তাঁর নির্বাচনী ব্যয় ১৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে দুই ভাই শাহ কামাল চৌধুরী, সরওয়ার জাহান চৌধুরী, ফুপাতো ভাই জহির চৌধুরী, মেয়ে নাজিয়া জাহান চৌধুরী দিয়েছেন ৭ লাখ এবং দলের নেতা সুলতান মাহমুদ চৌধুরী দিয়েছেন ১ লাখ টাকা। তাঁর নগদ টাকা আছে ৪ লাখ, ব্যাংকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৫৮২ টাকা। কৃষি, মৎস্য চাষ ও ফ্ল্যাট ভাড়া থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ১০ লাখ টাকা।
বিএনপির আরেক প্রার্থী মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। আইন পেশা ও দোকান ভাড়া থেকে তাঁর বার্ষিক আয় ৬ লাখ টাকা। কিন্তু তিনি ব্যয় করবেন ২৪ লাখ টাকা। বাকি টাকার মধ্যে ভাই গিয়াস উদ্দিন, খালাতো ভাই নুরুল কবির ও চাচাতো ভাই নুরুল করিম দিয়েছেন ৫ লাখ, দুলাভাই ও বোন দিয়েছেন ৫ লাখ এবং ৩ লাখ টাকা দিয়েছে বৃহত্তর চট্টগ্রাম আইনজীবী কল্যাণ সমিতি ঢাকা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইনজীবী কল্যাণ সমিতি বাংলাদেশ।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী আবুল মঞ্জুরের নগদ টাকা আছে মাত্র ১০ হাজার। ব্যাংকে জমা ১ লাখ। এই টাকায় কী নির্বাচন সম্ভব? তাই তিনি তিন ভাই আবুল মনছুর, আবুল ফয়েজ ও আবুল হাসনাতের কাছ থেকে নিয়েছেন ২ লাখ টাকা।
আবুল মঞ্জুর প্রথম আলোকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে ভোটারদের সচেতন করতেই তিনি মাঠে নেমেছেন। তা ছাড়া টাকা দিয়ে তিনি ভোট কিনবেন না, তাই খরচও কম। তিনি টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়ার একটি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মোহাম্মদ শোয়াইব খরচ করবেন ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু তাঁর নগদ টাকা আছে ১ লাখ ২০ হাজার। নির্বাচনী খরচ পরিচালনার জন্য তাঁর বাবা ছলিম উল্লাহ দিয়েছেন ২ লাখ, সৌদিপ্রবাসী ভাই মো. জুনাইদ ১ লাখ, ভাই মো. নোমান ও মো. আনাছ দিয়েছেন ২ লাখ, বোন শফিকা ৫০ হাজার, ইসলামী আন্দোলন উখিয়া ও টেকনাফ শাখা দিয়েছে ২ লাখ, আরও পাঁচজন আত্মীয়স্বজন দিয়েছেন ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এই প্রার্থীর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী রবিউল হোছাইনের নির্বাচনী ব্যয় মাত্র ২ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে বোন তসলিমা আক্তার চৌধুরী দিয়েছেন ১ লাখ টাকা। স্বশিক্ষিত এই প্রার্থীর চাকরি থেকে বার্ষিক আয় ১ লাখ ৬০ হাজার। কৃষি খাতে আয় ৩০ হাজার। নগদ কিংবা ব্যাংকে তাঁর কোনো টাকা নেই।
বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রার্থী সাইফুদ্দিন খালেদ খরচ করবেন ১৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর মধ্যে খালাতো ভাই হেলাল উদ্দিন দিয়েছেন ৫ লাখ, বন্ধু জাফর আলম দিয়েছেন ৫ লাখ টাকা। আইন পেশায় তাঁর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮০ হাজার। কৃষি খাতে আয় ২০ হাজার টাকা। নগদ আছে ১ লাখ, ব্যাংকে জমা ১ লাখ টাকা।
প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া তথ্যের ব্যাপারে ভোটারদের মধ্যেও রয়েছে প্রতিক্রিয়া। টেকনাফ উপজেলার এক ভোটার এইচ এম নজরুল বলেন, ‘নির্বাচন এলে বোঝা যায়, আমাদের নেতারা কতটা অসহায় ও গরিব।’