মহাজোট নিয়ে সক্রিয় আ.লীগ, দোটানায় ভাটা বিএনপিতে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একাধিক প্রস্তুতি সভা করে মহাজোটের ব্যানারে মাঠে নেমেছে সিলেটে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপি এখনো প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে সরব হতে মহানগর বিএনপি আগামী শনিবার বিশেষ বর্ধিত সভা ডেকেছে। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনকে সামনে রেখে এ সভার মধ্য দিয়ে ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা নির্ধারণ চূড়ান্ত হবে বলে সংগঠন সূত্র জানিয়েছে।

আওয়ামী লীগ মাঠে আর বিএনপি প্রস্তুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার এ অবস্থাকে সিলেটে নির্বাচনী রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এগিয়ে রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ায় সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে থাকা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। অপরদিকে এক আসনে একাধিক প্রার্থী থাকায় এবং প্রার্থী চূড়ান্ত না হওয়ায় দোদুল্যমান অবস্থায় আছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে একটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর মহাজোটের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা শুরু হয় গত ২৮ নভেম্বর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে। গত এক সপ্তাহে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল সর্বশেষ মহাজোটের সমন্বয় সভা হয়েছে। সর্বশেষ সভায় মহাজোটের সমন্বয়ক মনোনীত হন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। গত মঙ্গলবার তাঁর সভাপতিত্ব মহাজোটের মতবিনিময় সভা হয়।

সভায় বক্তারা বলেছেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থী বড় কথা নয়, এটি আমাদের আদর্শ ও অস্তিত্বের নির্বাচন। আদর্শিক শক্তির মাধ্যমে সব অপশক্তির ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’

বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের সভাপতিত্বে সভায় সিলেট-১ (মহানগর-সদর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ, জাসদ জেলা সভাপতি লোকমান আহমদ, গণতন্ত্রী পার্টি সিলেটের সভাপতি আরিফ মিয়া, ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেটের সভাপতি আবুল হোসেন, জাসদের মহানগর সভাপতি জাকির আহমদ প্রমুখ।

ঘরোয়া পরিসরে সভা ছাড়াও মাঠে মহাজোটকে নিয়ে প্রার্থীদেরও প্রচারণা শুরু হয়েছে। সিলেট-১ আসনের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন এসব সভায় নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানিয়ে বলছেন, গত ১০ বছরে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের যে উন্নয়ন হয়েছে, তা বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। এত কম সময়ে বিশ্বের কোনো দেশে এ রকম অভূতপূর্ণ উন্নয়ন হয়নি।

এদিকে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপির সক্রিয়তা আওয়ামী লীগের তুলনায় পিছিয়ে পড়ার কারণ সম্পর্কে স্থানীয় নেতারা দায়ী করছেন, প্রার্থিতা নিয়ে দোদুল্যমান থাকাকে। সিলেট-১ আসনে বিএনপি থেকে প্রার্থী হয়েছেন দুজন। তাঁরা হলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। একইভাবে অন্য পাঁচটি আসনে দুজন থেকে চারজন পর্যন্ত দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে সিলেট-৫ ও ৬ আসনটি ২০–দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির মনোনয়নে জামায়াতের দুজন প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে বিএনপি প্রার্থীরা সরব রয়েছেন জামায়াতকে ছাড় না দেওয়া নিয়ে। সেখানকার বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতা অনেকটা জামায়াতবিরোধী মনোভাবে চলছে বলে দুই নির্বাচনী এলাকার চার উপজেলা সূত্রে জানা গেছে।

নগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ রেজাউল করিম গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, আগামী শনিবার বেলা দুইটায় নগরের ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডের নুরে আলা কমিউনিটি সেন্টারে বিশেষ বর্ধিত সভা হবে। সভায় নির্বাচন সামনে রেখে সাংগঠনিক তৎপরতা ও একক প্রার্থী হলে ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে সার্বিক নির্বাচনী তৎপরতা সমন্বয় বিষয়বস্তু হিসেবে আলোচনা হবে।

দলের ওয়ার্ড পর্যায়ের তিনজন ও নগর কমিটির দুজন নেতা বলেন, কৌশলগত কারণে দুজন প্রার্থী দেওয়া হলেও সিলেট-১ আসনে এই কৌশল না নিলেই বরং চলত। একজন প্রার্থী দিলে বরং আওয়ামী লীগ কিংবা মহাজোটের প্রার্থীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া যেত। তবু দুজন প্রার্থী নিয়ে দোটানায় থাকা কর্মীরা দুই দিকে ভাগ হয়ে অনেকটা নীরবে সক্রিয় আছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ইনাম আহমদ চৌধুরী ও খন্দকার আবদুল মুক্তাদির-দুজনই কর্মীদের কাছে যাচ্ছেন। কারাবন্দী নেতাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন।

নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত চৌধুরী সাদেক বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তুলনা করলে পিছিয়ে পড়ার কারণ সাংগঠনিক দুর্বলতা নয়, বরং নির্বাচনে সমান সুযোগ না পাওয়া। তিনি জানান, এ সভার আগে যদি সিলেট-১ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়, তাহলে প্রার্থীকে নিয়ে সভা হবে। না হলে প্রার্থীকে ছাড়া নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে আলোকপাত করে সভা সমাপ্ত করা হবে।